Posts

প্রামাণিক কালীবাড়ি, বরাহনগর (Pramanik Kalibari, Baranagar)

Image
বরাহনগর অঞ্চলে যেমন রয়েছে বৈষ্ণব প্রভাব, তেমন রয়েছে শাক্ত প্রভাব। এখানে প্রামাণিক ঘাটের কাছে, ২২৫ প্রামাণিক ঘাট রোডের ঠিকানায় রয়েছে একটি প্রাচীন কালীমন্দির, যার নাম প্রামাণিক কালীবাড়ি। নবরত্ন কালীমন্দিরটির সামনে দুই দিকে রয়েছে দুইটি আটচালা শিব মন্দির। মন্দির চত্বরে প্রবেশদ্বারের ওপরে লেখা আছে - "প্রামাণিক কালীবাড়ি ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব কর্তৃক "মাসী সম্বোধনে ভূষিতা শ্রী শ্রী ব্রহ্মময়ী কালীমাতা স্থাপিত-১২৫৯ বঙ্গাব্দ (ইং-১৮৫৩) ১৫০ তম বৎসর উপলক্ষে স্মৃতি ফলক মাঘী পূর্ণিমা-১৪ ই ফাল্গুন-১৪০৮ বঙ্গাব্দ" মূল মন্দিরে প্রতিষ্ঠিতা কষ্টিপাথরের ব্রহ্মময়ী মায়ের মূর্তি। এই মূর্তির ভাস্কর ছিলেন বর্ধমান জেলার দাঁইহাট নিবাসী নবীন ভাস্কর। তবে এই মূর্তির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে একটা ইতিহাস। তৎকালীন সময় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাস্কর ছিলেন এই নবীন ভাস্কর। জনশ্রুতি আছে, এনার পরিবারের একজন পূর্বপুরুষকে পরিবারসহ বর্ধমানের এক রাজা রাজস্থানের জয়পুর থেকে এনে দাঁইহাটে স্থায়ীভাবে রেখে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভাস্কর পরিবারের কাজের খ্যাতি বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্র

বাবু সুবল চাঁদ চন্দ্র বাড়ির দুর্গাপুজো, বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রিট (Baboo Subol Chand Chunder House's Durgapuja, Bechu Chatterjee Street)

Image
সমগ্র কলকাতা জুড়ে অনেক বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো আমরা দেখতে যাই, তাদের সাবেকিয়ানা দেখে মুগ্ধ হই। এই সব পুজোগুলোর মধ্যে আমার একদম ব্যতিক্রমী লেগেছে, উত্তর কলকাতার বেচু চ্যাটার্জি স্ট্রীটে অবস্থিত বাবু সুবল চাঁদ চন্দ্র দের ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপুজো। চন্দ্র পরিবারের দুর্গা প্রতিমা, বাংলা জুড়ে পূজা করা বাকি মূর্তিগুলির থেকে একেবারেই আলাদা। এটি পরিবারের বৈষ্ণব শিকড়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে দেবীর শিব-দুর্গা রূপের পূজা করা হয়। এখানে, দেবী দুর্গাকে শিবের কোলে বসে থাকতে দেখা যায়। দেবী এখানে অভয়া রূপে বিরাজমান হন, যা শান্তি ও সম্প্রীতির প্রতীক। এবার এই পুজোর ইতিহাস একটু জেনে নেওয়া যাক। পূজোর সূত্রপাত করেছিলেন চন্দ্র পরিবারের পূর্বপুরুষ শ্রী রাম প্রসাদ চন্দ্র। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলে চন্দ্র পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হয়। উনবিংশ শতকের শেষের দিকে এই পরিবারের উত্তরপুরুষ বিশিষ্ট শিল্পপতি বাবু সুবল চাঁদ চন্দ্র, পুজোটিকে ঝামাপুকুর অঞ্চলের একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন। বাবু সুবল চাঁদ চন্দ্রর মূল ব্যবসা ছিল কাপড় এবং পাটের। ম্যানচেস্টার এবং বার্মিংহামে তার কাপড়ের

কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস, ভবানীপুর কবরখানা (Commonwealth War Graves, Bhawanipore Cemetery)

Image
SSKM হাসপাতালের যে গেটটা রেসকোর্সের পাশে আছে, তার পাশ দিয়ে দেবেন্দ্র লাল খান রোড (Debendra Lal Khan Road) গেছে ভবানীপুরের দিকে। এই রাস্তা দিয়ে যদি আমরা ভবানীপুরের দিকে হেঁটে যেতে থাকি, তবে ১৫ নাম্বারে এসে ডান হাতে দেখা যায় একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা কবরখানা, যার গেটের ওপরে লেখা আছে - "BHAWANIPORE CEMETERY - 1907". ১৮৬৪ সালে মূলত ফোর্ট উইলিয়ামের সামরিক অধিবাসীদের জন্য এই কবরখানা তৈরি হলেও, পরবর্তীকালে এখানে অসামরিক লোকজনকেও সমাধিস্থ করা হতে থাকে। এই কবরখানার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলো আমার অন্য একটা ব্লগ রয়েছে, সুবিধামতো সেটা পড়ে নিতে পারেন সেখানে। আমি এই ব্লগে আলোচনা করবো এখানকার কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস নিয়ে।  কবরখানা মূল প্রবেশপথ দিয়ে কিছুটা ঢুকে, সোজা ২০০ মিটার মতো গেলে একটা লোহার জালের রেলিং দিয়ে ঘেরা বর্গাকার জায়গা আছে। এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের কবরগুলো রয়েছে। কলকাতায় একমাত্র এখানেই আপনি সাজানো অবস্থায় সৈনিকদের সমাধি দেখতে পারেন।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় বহু বিদেশী সৈনিকের আগমন ঘটে। এখানে

রাধা গোবিন্দ কুঞ্জ মন্দির : গিরিবালা দাসীর ঠাকুরবাড়ি, আগরপাড়া (Radha Govinda Kunja Temple : Giribala Dasi Thakurbari, Agarpara)

Image
বি টি রোডের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে হুগলি নদী। এর দুই তীরে গড়ে উঠেছে বহু মন্দির। দক্ষিণেশ্বর থেকে  ব্যারাকপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে সেই মন্দিরগুলো। এর মধ্যে আগরপাড়া-সোদপুর-পানিহাটি অঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, যে মধ্যে কিছু কিছু হেরিটেজ তকমা পেলেও, অনেক মন্দির লাইমলাইটে আসে নি। সেগুলোর মধ্যেই একটা নিয়ে বলবো আজকে।  আগরপাড়া অঞ্চলে, নদীর তীরে রয়েছে একটি সুপ্রাচীন ঠাকুরবাড়ি... যার সাথে জড়িয়ে আছে গিরিবালা দাসীর নাম। রাণী রাসমণির জ্যেষ্ঠা কন্যা পদ্মামণির নাত-বৌ ছিলেন গিরিবালা দাসী। তিনি ছিলেন রূপে লক্ষ্মী, গুণে অসামান্যা। অকালে তাঁর তিন পুত্র এবং স্বামী গোপালকৃষ্ণ গত হবার পরে, অন্তরের শোক-তাপ নিয়েই তিনি সৎকার্য্যে মনোনিবেশ করেন। তাঁর প্রাতস্মরণীয়া দিদি-শাশুড়ী রাণী রাসমণির পদাঙ্ক অনুসরণ করে, ১৩১৮ বঙ্গাব্দে ১৮ই জ্যৈষ্ঠ (১লা জুন ১৯১১ ইং) বৃহস্পতিবার তিনি এই ঠাকুরবাড়ি পত্তন করেন। এর নাম তিনি রাখেন 'রাধা গোবিন্দ কুঞ্জ মন্দির'। এই ঠাকুরবাড়ি তৈরী করতে খরচ হয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। স্থপতি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার গগনচন্দ্র বিশ্ব

সুরিনাম ঘাট ও মেমোরিয়াল, মেটিয়াবুরুজ : ইতিহাসের একটা হারানো অধ্যায় (Suriname Ghat & Memorial, Metiaburz : A Forgotten History)

Image
মেটিয়াবুরুজের খ্যাতি মূলত নবাব ওয়াজিদ আলী শাহের জন্য। কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন, এই এলাকার মাটি একসময় ভিজেছে নিরীহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের চোখের জলে, যাদের নিরুপায় হয়ে পাড়ি দিতে হয়েছিল সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে।  এখানকার CESC Southern Generating Station এর মধ্যে দিয়ে একটা খুব পুরোনো ঘাটে যাওয়া যায় (পারমিশন করিয়ে নিতে হয় CESC গেটে)। এই ঘাটটি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে 'বালু ঘাট' নামেই পরিচিত। ঘাটটি প্রচারের আলোয় উঠে আসে ২০১৫ সালে। ওই বছরের ৭ই অক্টোবর, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আসেন মেটিয়াবুরুজের বালুঘাট তথা সুরিনাম ঘাটে। সুরিনাম ও ভারতের স্মৃতি বিজড়িত অ্যালুমিনিয়ামের মাই বাপ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন। আমরা এই ব্লগে জেনে নেব, সেই লাঞ্ছনার ইতিহাস। কিন্তু সেটার সম্পর্কে জানতে হলে, আমাদের আগে জানতে হবে সুরিনাম সম্পর্কে।  সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশের নাম হলো সুরিনাম। মূলতঃ কৃষি নির্ভর এই দেশটির ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায়, ষোড়শ শতকের শেষের দিকে ডাচ, ফরাসি ও ইংরেজ বণিকেরা সুরিনামের (পূর্বতন নাম ওলন্দাজ গায়ানা) উপকূলে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। পর

আর্মেনিয়ান হোলি চার্চ অফ নাজারাথ, কোলকাতা (Armenian Church of the Holy Nazareth, Kolkata)

Image
মরুভূমির মধ্যে মরুদ্যান দেখলে বেশ চমৎকার লাগে তো? ঘিঞ্জি বড়োবাজারের গলিগুলোর মধ্যে থেকে, হঠাৎ করে এই গির্জাটার মধ্যে ঢুকলে আপনার সেইরকম অনুভূতি হবে! প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, কোলকাতার প্রাচীনতম গির্জা এটা। আজকে যেখানে গড়ে উঠেছে এই চার্চ, সেটা ছিল আদপে আর্মানীদের সমাধিক্ষেত্র।  কোলকাতায় আর্মেনিয়ানদের ইতিহাস সুপ্রাচীন। ১৬৮৮ খ্রীষ্টাব্দে সুরাটের এক আর্মানী বণিক খোজা ফানুস কালান্টর, আরেক ব্যবসায়ী ও তার ভাগ্নে খোজা ইসরায়েল সরহদকে সাথে নিয়ে, ইংল্যান্ডে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডিরেক্টর বোর্ডের চেয়ারম্যান জোসিয়া চাইল্ডের সাথে দেখা করেন। এখানে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার সাহায্যে আর্মানীরা ভারতে ব্যবসার ও ধর্মচর্চার কিছু সুবিধা পায়।  “Whenever forty or more of the Armenian nation shall become inhabitants in any of the garrisons, cities, or towns, belonging to the Company in the East Indies, the said Armenians shall not only have and enjoy the free use and exercise of their religion, but there shall also be allotted to them a parcel of ground to erect a church thereon…." এই চুক্তি অনুয