Posts

Showing posts from 2023

মতিলাল শীলের ঠাকুরবাড়ি, বেলঘরিয়া (Motilal Seal's Thakurbari, Belgharia)

Image
ব্যারাকপুর ট্রাঙ্ক রোডের ওপরে, একটা জায়গার নাম রথতলা (জায়গাটা কামারহাটি পৌরসভা ভবনের কাছে)। এখানেই রাস্তার ওপরে একটা বাগান দিয়ে ঘেরা ঠাকুরবাড়ি রয়েছে, যায় সাথে জড়িয়ে আছে পুরনো কলকাতার বিখ্যাত ব্যাবসায়ী বাবু মতিলাল শীলের নাম। জায়গাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে, একটু জেনে নেওয়া যাক মতিলাল শীল সম্পর্কে। ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে জন্ম হয় মতিলাল শীলের। মুখের সোনার বা রুপোর চামচ নিয়ে জন্ম হয় নি তার। বাবার একটা ছোট কাপড়ের ব্যাবসা ছিল, কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি পিতৃহীন হন। চূড়ান্ত অভাবের মধ্যে বড়ো হলেও, মতিলাল ছিলেন বুদ্ধিমান এবং করিৎকর্মা। ১৮১৫ নাগাদ তিনি ফোর্ট উইলিয়ামে কাজে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার বরাত পান। এরপর নিজ ক্ষমতা আর বুদ্ধিবলে আস্তে আস্তে উন্নতি করতে থাকেন। নীল, চিনি, কাপড়, চাল এই সব চেনার এবং পরখ করার ক্ষমতার জন্য তৎকালীন বেশ কিছু এজেন্সি তাঁকে ‘বেনিয়ান’ হিসাবে নিয়োগ করেন। অর্থ উপার্জনের সাথে সাথে, তিনি অনেক সামাজিক সংস্কারের কাজ করেন। বিধবা বিবাহের সমর্থন, ফ্রি কলেজ নির্মাণ এবং মেডিক্যাল কলেজ তৈরীর জন্য ১২০০০ টাকার অনুদান

উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী : এশিয়ার প্রথম পাবলিক লাইব্রেরী (Uttarpara Jaykrishna Library: The First Public Library of Asia)

Image
হুগলি জেলার একটি বিশিষ্ট জনপদ হলো উত্তরপাড়া। হাওড়ার শেষ উত্তরে বালিগ্রাম এখন শহর। তার লাগোয়া উত্তরে বালিখাল পেরিয়ে হুগলি জেলার প্রথম শহরটি উত্তরপাড়া । শহরের পত্তনের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের জনক লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরীর বড় ছেলের নাতি রত্নশ্বের রায়চৌধুরী, শেওড়াফুলির জমিদার মনোহর রায়ের কাছ থেকে ১৭০৯ খ্রিষ্টাব্দে চকবালির উত্তরাংশ কিনে পত্তন করেন উত্তরপাড়া। এই উত্তরপাড়ায় রয়েছে একটি বিরাট বড়ো পাবলিক লাইব্রেরি, যার পত্তন করেছিলেন এখানকারই বিশিষ্ট জমিদার এবং সমাজ সংস্কারক জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়। এটি ভারতের প্রথম এবং সম্ভবতঃ এশিয়ার প্রথম বিনামূল্যে জনসাধারণের জন্য গ্রন্থাগার। লাইব্রেরীর বিষয়ে আরো বলার আগে, জেনে নেওয়া যাক জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্কে। ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে আগস্ট উত্তরপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারের তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে কিছুদিন হিন্দুস্কুলে পড়াশোনা করলেও, পিতার কর্মসূত্রে মাত্র ৮ বছর বয়সেই তিনি মিরাটে চলে যান এবং রেজিমেন্ট স্কুলে জয়েন করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে হুগলির ভূমি রাজস্ব বিভাগের রেকর্ড রক্ষকের চাকরীতে নিযুক্ত হন এবং

কারমেলাইট চ্যাপেল, আউটরাম স্ট্রিট (Carmelite Street, Outram Street)

Image
শেক্সপিয়ার সরণির বুক চিরে চলে গেছে একটা ছোট রাস্তা, যার নাম আউটরাম স্ট্রিট। এখানে একটা বাড়িতে রয়েছে খ্রিস্টান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের একটা মঠ, যা সাধারণ মানুষের খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। এর কারণ এখানে বাস করেন কারমেলাইট সন্ন্যাসিনীরা, যারা সামাজিকভাবে কোনো সেবাকার্যতে অংশগ্রহণ করেন না। মানবসমাজের দৃষ্টির আড়ালে থেকে, তারা নিজেদের মতো ঈশ্বরের আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন... আত্মমুক্তি ও মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলকামনায়। মঠভবনের ভেতরেই তাদের প্রার্থনার জন্য রয়েছে নিজস্ব চ্যাপেল। তাদের মূল ব্রত হল প্রার্থনা, উপবাস, প্রায়শ্চিত্ত, মৌনতা, নিঃসঙ্গতা ও কায়িক শ্রম।  ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বিশপ ফার্দিনান্দ পেরিয়ারের আমন্ত্রণে সংঘের পাঁচজন সন্ন্যাসিনী বেলজিয়াম থেকে কলকাতায় আসেন। তাদের জন্য তখনও মঠ প্রতিষ্ঠার কোনও উদ্যোগ না হওয়ায়, প্রথমে তারা প্রায় দুই বছর খিদিরপুরের সেন্ট ভিনসেন্ট হোমে অতিথি হিসেবে থাকেন। এরপর হেস্টিংস অঞ্চলে মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি কেনা হল, কিন্তু তাও আবার সৈন্যবিভাগের প্রয়োজনে সরকার অধিগ্রহণ করল। শেষে জনৈক মুসলমান জমিদারের কাছ থেকে বর্তমান বাড়িটি কিনে করে ১৯

পর্তুগিজ কবরখানা, শিয়ালদা (Portuguese Cemetery, Sealdah)

Image
শিয়ালদা স্টেশনের ট্রেন ধরা আর বাড়ি পৌঁছানোর তাগিদে অনেকেই খেয়াল করেন না একটা ছোট লাল রঙের চার্চকে, যার ঠিকানা ৩০৮, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড।  চার্চটি নিয়ে আমি আগেই লিখেছিলাম। কিন্তু যেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না, সেটা হলো চার্চ সংলগ্ন একটা কবরখানা, যেটা ক্যাথলিকদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা। মজার বিষয় হচ্ছে, কবরখানা প্রতিষ্ঠিত হয় চার্চ তৈরির আগে। কলকাতার বিখ্যাত পর্তুগিজ বণিক জোসেফ ব্যারেটো এ জমি ৮০০০ টাকায় কিনে ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে তা সমাধিক্ষেত্র স্থাপনের জন্য দান করেছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল শহরে পর্তুগিজদের জন্য একটি আলাদা সমাধি ক্ষেত্র তৈরি করা। কলকাতার অনেক চার্চ ও চ্যাপেলের প্রতিষ্ঠার পিছনে ব্যারেটো পরিবারের অবদান ছিল। এখানে প্রথম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে একটি চ্যাপেল গড়ে ওঠে, তার নাম ছিল সেমিট্রি-চ্যাপেল... যা পরবর্তীকালে একটি চার্চের রূপ নেয়।  অনেকদিন ধরে চেষ্টা করা সত্ত্বেও, আমি এই কবরখানাতে একদিন ঢুকতে পেরেছিলাম (এর কারণ সাধারণ মানুষের জন্য খুব কম সময় এই চার্চ খোলা থাকে)। চার্চের পিছনের দিকেই রয়েছে এই কবরখানা, যার শেষ হয়েছে শিয়ালদা স্টেশনের প্ল্যাটফর্

দ্য রাসেল এক্সচেঞ্জ : ভারতের প্রাচীনতম নিলামঘর (The Russell Exchange : Oldest Auction House of India)

Image
সময়টা তখন মোটামুটি ১৯৪০ সালের মাঝামাঝি। পৃথিবী জুড়ে বাজছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এই সময় উত্তরপ্রদেশের বেরিলি থেকে কলকাতায় ব্যাবসা করতে এলেন আব্দুল মাজিদ, মাথায় ছিল তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধি এবং হৃদয়ে ছিল পুরনো জিনিসের প্রতি ভালোবাসা। সেই সূত্রে মাজিদ-সাহেব কলকাতার এদেশীয় ধনী এবং অভিজাত পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপ বাড়াতে শুরু করলেন। কলকাতাতে তখন ইংরেজ এবং অন্য ইউরোপিয়ানরা ধীরে ধীরে পাততাড়ি গোটাচ্ছেন। এছাড়াও চাকরির সূত্রে এদের ট্রান্সফার লেগেই থাকতো। তাই কলকাতা ছেড়ে চলে যাবার সময় এরা নিজেদের সাধের ফার্নিচারগুলো নিয়ে পরতেন খুব সমস্যায়। তাই চাইতেন কোনোভাবে সেগুলো বিক্রি করে দেবার। এদিকে এদেশীয়দের মধ্যে এসব ব্যবহার করা জিনিষ এবং আসবাবের আকর্ষণ প্রবল! তাই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিলন করার জন্য রাসেল স্ট্রীটে আব্দুল মাজিদ খুলে বসলেন একটা নিলামঘরের ব্যবসা, নাম দিলেন 'দ্য রাসেল এক্সচেঞ্জ'! বিক্রির জন্য আসতে লাগলো বিরাট পিয়ানো, ঝাড়লণ্ঠন, শ্বেতপাথরের টেবিল, নরম গালিচার মতো অজস্র জিনিস। ভেনিশিয়ান বা বোহেমিয়ান গ্লাস এর জিনিস, সতসুমা টি-সেট, অধুনা দুষ্প্রাপ্য ইংল্যান্ডের রয়্

কলকাতা আর্ট স্টুডিও : লিথোগ্রাফ শিল্পের এক অনবদ্য অধ্যায় (Calcutta Art Studio : A forgotten chapter in Lithograph Art)

Image
বৌবাজারের বি. বি. গাঙ্গুলি স্ট্রীট দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ১৮৫/১ নাম্বারে একটা ঘুপচি দোতলা বাড়ি দেখা যায়, যেখানে আছে Calcutta Art Studio Pvt. ltd. এর অফিস। সাইনবোর্ডে লেখা আছে, এই সংস্থার জন্ম হয়েছিল ১৮৭৮ সালে। আপাতদৃষ্টিতে দেখে বোঝা যাবে না, এই ছোট্ট স্টুডিওটি একসময় প্রিন্টিং জগতে আলোড়ন এনেছিল। উনিশ শতকে কালীঘাট চিত্রকলা ও কালীঘাটের পট, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী শহর কোলকাতার কালীঘাটের কালীমন্দিরের সংলগ্ন এলাকায় বিকশিত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তীর্থযাত্রীরা তাদের নিজেদের এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য, তীর্থযাত্রার স্মারক হিসেবে স্মৃতিচিহ্ন এই পট ও ছবিগুলো নিয়ে যেতেন। কালীঘাটের কালীমন্দিরের সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে, স্মারক হিসেবেই কালীঘাট চিত্রকলার উদ্ভব ঘটেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে এই চিত্রকলার বিষয় ছিল পৌরাণিক-ধর্মীয় কাহিনী। কিন্তু ক্রমে তা ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়কেও তুলে ধরতে থাকে, এবং এতে সমসাময়িক সামাজিক বিষয়ের প্রতিফলনও লক্ষ্য করা যায়... যা এতদিন পর্যন্ত তীর্থক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট শিল্পকলার আওতা বহির্ভূত ছিল। এই চিত্রকলায় নতুন নাগরিক সমাজের মূল্যবোধ প্রতিফল

আরিয়াদহ পাটবাড়ি এবং শ্রী গদাধর দাস (Ariadaha Patbari & Sri Gadadhar Das)

Image
দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের লাগোয়া আরিয়াদহ অঞ্চলে রয়েছে একটি রাস্তা, যার নাম পাটবাড়ি লেন। এখানে জন্ম হয়েছে বিখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ হরিনাথ দে - এর। তবে রাস্তাটির নামকরণ হয়েছে বাংলার এক বিখ্যাত গৌড়ীয় ধর্মস্থানের নাম অনুযায়ী, যার সাথে জড়িয়ে আছে শ্রী গদাধর দাস বা গদাধর পণ্ডিতের নাম।  গদাধর পণ্ডিত ছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তারা শৈশবকাল তথা সন্ন্যাসী জীবনের এক দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের অনুরোধে তিনি পুন্ডরিকা বিদ্যানিধির কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। আরিয়াদহতে নদীর ধারে একটি জায়গায় তিনি অনেক বছর কাটিয়ে, তারপর চলে যান কাটোয়াতে। সেখানে তিনি গৌরাঙ্গ বাড়িতে 'বড়ো গৌরাঙ্গ'র সেবা করে জীবনের শেষ কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেন। আরিয়াদহতে থাকার সময় তিনি তার বাল গোপালের নিয়মিত সেবা করতেন। কাটোয়া চলে গেলেও সেই গোপাল এখানেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। মোটামুটি ৫০০ বছর ধরে, অনেকের হাতে সেই মন্দিরের মালিকানা হাতবদল হতে থাকে। সর্বশেষে কলকাতার মধুসূদন মল্লিক ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে (১২৫৬ বঙ্গাব্দ) মন্দিরটির আমূল সংস