পর্তুগিজ কবরখানা, শিয়ালদা (Portuguese Cemetery, Sealdah)

শিয়ালদা স্টেশনের ট্রেন ধরা আর বাড়ি পৌঁছানোর তাগিদে অনেকেই খেয়াল করেন না একটা ছোট লাল রঙের চার্চকে, যার ঠিকানা ৩০৮, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রোড। 



চার্চটি নিয়ে আমি আগেই লিখেছিলাম। কিন্তু যেটা বাইরে থেকে দেখা যায় না, সেটা হলো চার্চ সংলগ্ন একটা কবরখানা, যেটা ক্যাথলিকদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা। মজার বিষয় হচ্ছে, কবরখানা প্রতিষ্ঠিত হয় চার্চ তৈরির আগে। কলকাতার বিখ্যাত পর্তুগিজ বণিক জোসেফ ব্যারেটো এ জমি ৮০০০ টাকায় কিনে ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে তা সমাধিক্ষেত্র স্থাপনের জন্য দান করেছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল শহরে পর্তুগিজদের জন্য একটি আলাদা সমাধি ক্ষেত্র তৈরি করা। কলকাতার অনেক চার্চ ও চ্যাপেলের প্রতিষ্ঠার পিছনে ব্যারেটো পরিবারের অবদান ছিল। এখানে প্রথম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে একটি চ্যাপেল গড়ে ওঠে, তার নাম ছিল সেমিট্রি-চ্যাপেল... যা পরবর্তীকালে একটি চার্চের রূপ নেয়। 


অনেকদিন ধরে চেষ্টা করা সত্ত্বেও, আমি এই কবরখানাতে একদিন ঢুকতে পেরেছিলাম (এর কারণ সাধারণ মানুষের জন্য খুব কম সময় এই চার্চ খোলা থাকে)। চার্চের পিছনের দিকেই রয়েছে এই কবরখানা, যার শেষ হয়েছে শিয়ালদা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পাশের দেওয়ালে। এখানে তেমন খুব একটা বেশি দেখভাল করা হয় না। জমির দক্ষিণে একটা অংশ নিয়েছে মিশনারীজ অফ্ চ্যারিটি থেকে, সেখানে সন্ন্যাসিনীদের থাকার জায়গা রয়েছে। তারই সংলগ্ন জমিতে সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে তাদের সন্ন্যাসিনীদের এবং চার্চের ফাদারদের সমাধি, যা খুব ভালো মতো সংরক্ষণ করা হয়। বাকি সমাধিক্ষেত্র আগাছা দিয়ে ঢাকা। 


যাদের সমাধি এখানে রয়েছে, তাদের অনেকেরই পরিবারের কেউ আর বেঁচে নেই অথবা এদেশে নেই। তাই এনাদের কবরগুলো সংরক্ষণ করার জন্য কোনো ফান্ড আসে না। অনেক পুরনো সমাধি বেশ অবহেলিতভাবে পরে আছে, এবং অনেক সমাধির থেকে মূর্তিও চুরি হয়ে গেছে। এরোকম চলতে থাকলে, অচিরেই এই পুরনো সমাধিস্থাপত্যগুলো লোপ পাবে।

Comments

Popular posts from this blog

কোলকাতার পার্সি অগ্নি-মন্দিরগুলোর গল্প (The Parsi Fire Temples of Kolkata)

নতুন কোলকাতার পুরোনো ভুতেদের গল্প (Story of the Old Ghosts of New Calcutta)

এক পশুদরদী সাহেব ও এশিয়ার প্রাচীনতম পশুপীড়ন নিবারণী প্রতিষ্ঠানের গল্প (Colesworthey Grant and Calcutta Society for the Prevention of Cruelty to Animals)