আরিয়াদহ পাটবাড়ি এবং শ্রী গদাধর দাস (Ariadaha Patbari & Sri Gadadhar Das)
দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলের লাগোয়া আরিয়াদহ অঞ্চলে রয়েছে একটি রাস্তা, যার নাম পাটবাড়ি লেন। এখানে জন্ম হয়েছে বিখ্যাত ভারতীয় ইতিহাসবিদ হরিনাথ দে - এর। তবে রাস্তাটির নামকরণ হয়েছে বাংলার এক বিখ্যাত গৌড়ীয় ধর্মস্থানের নাম অনুযায়ী, যার সাথে জড়িয়ে আছে শ্রী গদাধর দাস বা গদাধর পণ্ডিতের নাম।
গদাধর পণ্ডিত ছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তারা শৈশবকাল তথা সন্ন্যাসী জীবনের এক দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। পরবর্তীকালে চৈতন্যদেবের অনুরোধে তিনি পুন্ডরিকা বিদ্যানিধির কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। আরিয়াদহতে নদীর ধারে একটি জায়গায় তিনি অনেক বছর কাটিয়ে, তারপর চলে যান কাটোয়াতে। সেখানে তিনি গৌরাঙ্গ বাড়িতে 'বড়ো গৌরাঙ্গ'র সেবা করে জীবনের শেষ কয়েকটি দিন কাটিয়ে দেন।
আরিয়াদহতে থাকার সময় তিনি তার বাল গোপালের নিয়মিত সেবা করতেন। কাটোয়া চলে গেলেও সেই গোপাল এখানেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত থাকে। মোটামুটি ৫০০ বছর ধরে, অনেকের হাতে সেই মন্দিরের মালিকানা হাতবদল হতে থাকে। সর্বশেষে কলকাতার মধুসূদন মল্লিক ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে (১২৫৬ বঙ্গাব্দ) মন্দিরটির আমূল সংস্কার করে, একে একটি দালান রীতির মন্দিরে পরিণত করেন এবং বিগ্রহের নিত্যপূজার ব্যবস্থা করেন। গদাধর পণ্ডিতের আসল সমাধি কাটোয়াতে থাকলেও, এখানে তার একটি পুষ্পসমাধি রয়েছে, যাকে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর দানলীলা ক্ষেত্র এবং শ্রী গদাধরের ভজনাশ্রম ও সমাধি তীর্থ বলা হয়। এই পূণ্যস্থানটিকে 'গদাধর দাস শ্রীপাট' বলেও অভিহিত করা হয়, আর সেখান থেকেই এসেছে 'পাটবাড়ি' নামটি।
বর্তমানে এই মন্দিরে এলে, প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে অনন্যসুন্দর কৃষ্ণ গোপাল জিউ এর এই কষ্টিপাথরের মূর্তিটি। শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু দর্শন করে গেছেন এই মূর্তি। গোপালের সাথে রয়েছে অষ্টধাতুর একটি রাধামূর্তি। এই মূর্তির ডানদিকে রয়েছে নিত্যানন্দ যুগলের দারু বিগ্রহ, এবং বামদিকে রয়েছে জান্নভা দেবীর দারুমূর্তি। নিত্যানন্দ যুগলের মূর্তিদুটি প্রতিষ্ঠা করেন বলাইচাঁদ মল্লিক ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (১৩১২ বঙ্গাব্দ), সম্ভবত জান্নভা দেবীর দারুমূর্তিও একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত।
ঠাকুরদালানে রয়েছে অনেকগুলো হাতে আঁকা ছবি, যেখানে নিত্যানন্দ প্রভু এবং তাঁর লীলা চিত্রিত আছে। একটি বিশেষ ছবি দেখলাম, যেটি দেখে শ্রী রামকৃষ্ণদেব মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীকে এখানে ডেকে এনে দেখিয়েছিলেন। এছাড়াও মধুসূদন মল্লিকের একটি ছবিও আছে এখানে।
মন্দির খোলা থাকে সকাল ৫ টা থেকে দুপুর ১১ টা, আবার বিকেল ৪ টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রচুর ভক্তের আগমন ঘটে এখানে। মন্দিরের লাগোয়া রয়েছে মল্লিকবাড়ি, ছবি তুলতে হলে এখানের থেকে অনুমতি নিতে হয়। মন্দিরটি এখনো সম্পূর্ণ ভাবে মল্লিকদের মালিকানাধীন। তবে অবিলম্বে এখানে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন, কারণ এই পাটবাড়ি বাংলায় গৌড়ীয় ভাবধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ।
তথ্য সূত্র:
thegaudiyatreasuresofbengal.com/2018/01/12/sri-gadadhara-das-sripat-ariadaha/
তথ্য সহায়তা: মল্লিক পরিবারের সঞ্জয় মল্লিক এবং বর্তমান পুরোহিত মশাই।
Comments
Post a Comment