কারমেলাইট চ্যাপেল, আউটরাম স্ট্রিট (Carmelite Street, Outram Street)

শেক্সপিয়ার সরণির বুক চিরে চলে গেছে একটা ছোট রাস্তা, যার নাম আউটরাম স্ট্রিট। এখানে একটা বাড়িতে রয়েছে খ্রিস্টান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের একটা মঠ, যা সাধারণ মানুষের খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। এর কারণ এখানে বাস করেন কারমেলাইট সন্ন্যাসিনীরা, যারা সামাজিকভাবে কোনো সেবাকার্যতে অংশগ্রহণ করেন না। মানবসমাজের দৃষ্টির আড়ালে থেকে, তারা নিজেদের মতো ঈশ্বরের আরাধনায় নিমগ্ন থাকেন... আত্মমুক্তি ও মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলকামনায়। মঠভবনের ভেতরেই তাদের প্রার্থনার জন্য রয়েছে নিজস্ব চ্যাপেল। তাদের মূল ব্রত হল প্রার্থনা, উপবাস, প্রায়শ্চিত্ত, মৌনতা, নিঃসঙ্গতা ও কায়িক শ্রম। 

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বিশপ ফার্দিনান্দ পেরিয়ারের আমন্ত্রণে সংঘের পাঁচজন সন্ন্যাসিনী বেলজিয়াম থেকে কলকাতায় আসেন। তাদের জন্য তখনও মঠ প্রতিষ্ঠার কোনও উদ্যোগ না হওয়ায়, প্রথমে তারা প্রায় দুই বছর খিদিরপুরের সেন্ট ভিনসেন্ট হোমে অতিথি হিসেবে থাকেন। এরপর হেস্টিংস অঞ্চলে মঠ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি কেনা হল, কিন্তু তাও আবার সৈন্যবিভাগের প্রয়োজনে সরকার অধিগ্রহণ করল। শেষে জনৈক মুসলমান জমিদারের কাছ থেকে বর্তমান বাড়িটি কিনে করে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জুন ওখানে তাদের মঠ প্রতিষ্ঠা করা হল। 


মূল বাড়িটি প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো। সেই মুসলিম জমিদার সেটি কিনেছিলেন একজন ইউরোপিয়ান ভদ্রলোকের থেকে, তাই সেটা ছিল নানা কারুকার্য শোভিত। মঠ প্রতিষ্ঠার আগেই যাবতীয় অলংকরণ তৃলে ফেলে, মঠের আদর্শ রক্ষার জন্য তা নিরাভরণ করা হয়। অলংকরণের সামান্য অবশিষ্ট এখনও লক্ষ করা যাবে বাইরের দিকের বসার ঘরে। 


মঠের পরিসীমাতেই দক্ষিণ দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সাধারণ ভক্তদের জন্য এক গির্জা। এ গির্জাটির গড়নেও বাইরের কোনও চাকচিক্য নেই। ছাদের উপর গম্বুজের আকৃতির একটি নকশাতে প্রতিষ্ঠিত আছে পবিত্র ভ্রুশ। রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথানুসারে, এখানেও প্রার্থনাগৃহের ভিতরটা বর্ণময় যিশু-বিষয়ক নানা চিত্রে অলংকৃত। গির্জার বাইরের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে কয়েকটি মূর্তি রয়েছে, যেগুলো মাতা মেরি, শিশু যীশু এবং স্বর্গদূতদের।


এই গির্জায় প্রতি রবিবার শুধুমাত্র সাধারণ মানুষদের জন্য প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়, ইংরেজি ভাষায়। সেন্ট জেভিয়ার্স চ্যাপেলের একজন পুরোহিত সেটি সম্পাদনা করেন।


তথ্যসূত্র: কলকাতার উপাসনালয় দ্বিতীয় খণ্ড, পীযুষকান্তি রায়

Comments

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)