Posts

Showing posts from May, 2025

গঙ্গার তীরে কালের সাক্ষী: বরানগরের কৃপাময়ী কালীবাড়ি (Witness to Time on the Ganges: The Kripamoyee Kalibari of Baranagar)

Image
গঙ্গার শান্ত তীরে, কালের নীরব পদধ্বনির মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বরানগরের কৃপাময়ী কালীবাড়ি – যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। একদা এই গঙ্গার ধারেই গড়ে উঠেছিল প্রতাপশালী জমিদার আর ধনকুবের বণিকদের বসতি। তাঁদের অনেকেই এই পবিত্র তীরে স্থাপন করেছিলেন দেবালয়, রচনা করেছিলেন উপাসনার শান্ত নীড়। সময়ের নিষ্ঠুর স্রোতে অনেক মন্দির কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে, নয়তো অযত্নে ধুঁকছে। তবুও কিছু মন্দির আজও আপন মহিমায় উজ্জ্বল, প্রতিষ্ঠাতাদের বংশধরদের অক্লান্ত চেষ্টায় ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। বরানগরের মালপাড়ার কুঠিঘাটে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে বিরাজমান কৃপাময়ী কালীবাড়ি তেমনই এক ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দির প্রাঙ্গণ, যা বহু যুগের না বলা কথা নীরবে শুনেছে। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন শোভাবাজারের বিখ্যাত ধনাঢ্য ব্যক্তি জয়নারায়ণ মিত্র। তাঁর পিতা রামচন্দ্র মিত্র এককালে এক জাহাজ ক্যাপ্টেনের বেনিয়ান রূপে অগুনতি অর্থ উপার্জন করেছিলেন। সেই বিপুল ঐশ্বর্যের উত্তরাধিকারী জয় মিত্র প্রথাগত শিক্ষায় পণ্ডিত না হয়েও ব্যবসায়িক দক্ষতায় আরও সম্পত্তি বৃদ্ধি করেন এবং দানধ্যান ও সামাজিক কল্যাণে মুক্তহস্তে অর্থ দান করতেন। শোভাবাজারের পথ আজও তাঁর ...

বাংলার সবথেকে বড়ো ইমামবাড়া, মুর্শিদাবাদ (The Grand Imambara of Murshidabad: A Jewel of Bengal)

Image
বাংলার সবথেকে বড়ো ইমামবাড়া রয়েছে মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারির পাশেই। সিরাজদ্দৌলার তৈরী কাঠের ইমামবাড়া আগুনে পুড়ে গেলে, তৎকালীন নবাব নাজিম ফেরাদুন জা ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে এটি নতুন করে তৈরী করেন। এই ইমামবাড়ার স্থপতি ছিলেন সাদেক আলী, এবং ১১ মাসে এটি তৈরী হয়; খরচ হয়েছিল প্রায় ছয় লক্ষ টাকা।  ইমামবাড়াটির দৈর্ঘ্য ৬৮০ ফুট, প্রস্থ অবশ্য সব স্থানে সমান নয়। মধ্যের অংশ ৩০০ ফুট। নির্মাণকাজ চলার সময় শ্রমিকদের এখানে থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত ছিল, যাতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা যেতে পারে। ইমামবাড়া সম্পূর্ণ হলে, পারিশ্রমিকের সাথে শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছিল মূল্যবান দোশালা (দুটো শাল) ও রুমাল (বর্গাকার মাপের শাল)। শ্বেতশুভ্র দুইতলা ইমামবাড়াটি, তিনটি আয়তক্ষেত্রকার অঙ্গনে বিভক্ত; পূর্বাঙ্গন, মধ্যাঙ্গন ও পশ্চিমাঙ্গন। এর মধ্যাঙ্গনে রয়েছে সিরাজদৌল্লা নির্মিত মদিনার থেকে বড় একটি মদিনা। এটি মাটি থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট উঁচু। মীনা করা টাইলস বসানো এবং গম্বুজের মাথায় পেতল দিয়ে বাঁধানো রয়েছে। এখানে মহরমের সময় মাটির ঘোড়া ও সিন্নি দিয়ে, মানত করে যায় হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। মধ...

কাঠগোলা প্রাসাদ, মুর্শিদাবাদ (Kathgola Palace, Murshidabad)

Image
মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাসাদগুলির মধ্যে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে কাঠগোলা প্রাসাদ। যদিও হাজারদুয়ারীর জৌলুস অনেক বেশি, তবুও ভাগীরথীর শান্ত তীরের অনতিদূরে, প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই হলুদ বর্ণের প্রাসাদটি তার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্য আজও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর কারুকার্যময় দেওয়াল যেন এক নীরব কবিতা, যা অতীত দিনের সমৃদ্ধির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই সুরম্য প্রাসাদটি জিয়াগঞ্জের খ্যাতনামা রাজা শ্রী লক্ষ্মীপৎ সিং দুগগার এবং তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতা শ্রী ধনপৎ সিং দুগগারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছিল। ইতিহাসের পাতা উল্টালে শোনা যায়, পলাশীর সেই কুখ্যাত ষড়যন্ত্রের কিছু গোপন যোগসূত্র নাকি এই প্রাসাদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছিল। যদিও ঠিক কবে এই প্রাসাদ নির্মাণের সূচনা হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ হয়, যা আজও কালের বুকে এক স্থাপত্য বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রাসাদটির 'কাঠগোলা' নামকরণের উৎস নিয়ে দুটি ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। প্রথম...

জাফরাগঞ্জ প্রাসাদ, সমাধিক্ষেত্র এবং মক্তব: মুর্শিদাবাদ (Zafraganj Palace, Cemetery and Maktab: Murshidabad)

Image
হাজারদুয়ারি প্রাসাদের কোলাহল থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে, ভাগীরথী নদীর তীরে এক সময়ের জৌলুসপূর্ণ জাফরাগঞ্জ আজ কালের নীরব সাক্ষী। এখানে দাঁড়ালে ভগ্নপ্রায় এক প্রাসাদের অংশ এখনও অতীতের রাজকীয়তার ক্ষীণ স্মৃতি বহন করে। এই প্রাসাদটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁ নির্মাণ করেছিলেন। শোনা যায়, নবাব তার বৈমাত্রেয় বোন, শাহখানমের প্রতি অগাধ স্নেহবশত এই সুরম্য প্রাসাদটি উপহার দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এই প্রাসাদ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের নীরব দর্শক হয়ে ওঠে। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিমূর্তি মীরজাফর একসময় এই বাড়িতেই বসবাস করতেন। জনশ্রুতি আছে, এখানেই নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বন্দি করে আনা হয়েছিল এবং এখানেই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ভয়াবহ স্মৃতি আজও যেন প্রাসাদের বাতাসে মিশে আছে। বর্তমানে প্রাসাদের মূল অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত, কেবল প্রবেশদ্বার পর্যন্ত যাওয়া যায়। স্থানীয় মানুষের কাছে এই প্রবেশদ্বারটি এক গভীর ঘৃণার প্রতীক, যা "নিমকহারাম দেউড়ি" নামে পরিচিত – বিশ্বাসঘাতকতার নীরব অভিশাপ যেন আজও এই দেউড়ির পাথরে খোদাই করা আছে। ...

বরানগর পাঠবাড়ি : ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অমুল্য ধারক (Baranagar Pathbari: A Priceless Repository of History and Heritage)

Image
বরানগরের পাঠবাড়ি, কালের বহু উত্থান-পতনের নীরব সাক্ষী। এই পবিত্র স্থানটি শুধু একটি আশ্রম নয়, এটি ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। ভক্তদের বিশ্বাস, স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর পবিত্র পদধূলি দিয়ে এই স্থানকে ধন্য করেছিলেন। সেই স্মৃতি আজও এখানে অমলিন। এই আশ্রমের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ইতিহাস প্রসিদ্ধ বকুল গাছটি। যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই বকুল গাছটি যেন কালের কণ্ঠস্বর। দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন অজস্র মানুষ এই পাঠবাড়িতে আসেন। শুধু দেব-দেবীর পূজা অর্চনার জন্যই নয়, অনেকে আসেন এই বকুল গাছের কাছে নিজেদের বাড়ি ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় মাথা ছুঁইয়ে আশীর্বাদ নিতে। ভক্তরা পরম শ্রদ্ধার সাথে গাছ থেকে পড়া বকুল ফুল তুলে নিয়ে যান, যেন সেই ফুল স্পর্শে তাদের মন পবিত্র হয়। এমনকি গাছের গোড়ার মাটিও কেউ কেউ তিলক রূপে কপালে ধারণ করেন, গভীর বিশ্বাসে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আশ্রমের এই ঐতিহাসিক বকুল গাছটি ঠিক কবে রোপণ করা হয়েছিল, তা নিয়ে আজও বিভিন্ন জনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। শুধু বকুল গাছই নয়, রামদাস বাবাজি মহারাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই পাঠবাড়ি আশ্রমে আরও অনেক অমূল্য সম্প...

কল্পনার তুলিতে আঁকা নন্দনকানন: অবনীন্দ্রনাথের কোন্নগরের বাগানবাড়ি (A Painter's Paradise: Abanindranath Tagore's Garden House in Konnagar)

শুভ্রতার প্রতিমূর্তি একতলা ভবনটি যেন কালের নীরব সাক্ষী। এর শরীরে লেগে আছে অতীতের স্নিগ্ধ পরশ। খড়খড়ির ফাঁক গলে আসা আলোছায়া এক মায়াবী জগৎ তৈরি করে, আর উঁচু উঁচু খিলানগুলি যেন আকাশের দিকে প্রসারিত নীরব আমন্ত্রণ। কড়ি-বর্গার সাবেকি ছাদ ঐতিহ্যের গল্প শোনায়। বাড়ির সম্মুখের সিঁড়িগুলি সর্পিল পথে নেমে গেছে সরাসরি মা গঙ্গার শান্ত স্রোতের অভিমুখে – যেন ভূমি আর অনন্তের এক নিবিড় আলিঙ্গন। ডানদিকের স্নিগ্ধ ঘরে, জানালার শান্ত সান্নিধ্যে, বালক অবনীন্দ্রনাথ মগ্ন তুলির টানে ফুটিয়ে তুলছেন রঙের মায়াজাল। কখনও আবার উদাসীন নয়নে তাকিয়ে থাকেন বহমান নদীর দিকে, তাঁর কিশোর মন কল্পনার অলীক রাজ্যে ডুব দেয় – যেখানে রূপকথারা জীবন্ত হয়ে ওঠে। দীর্ঘকাল অবহেলায় জীর্ণপ্রায় থাকার পর, অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগ এবং কোন্নগর পৌরসভার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২০ সালের ৫ই মার্চ এই প্রাচীন স্মৃতিসৌধটি নবজীবন লাভ করেছে। গঙ্গার তীরে তারুণ্যের ছোঁয়া লেগেছে। কোন্নগর পৌরসভার একনিষ্ঠ কর্মচারী শুকদেব ঘোষাল আবেগের সঙ্গে জানালেন, “আমরা কিন্তু রীতিমতো কঠিন লড়াই করে এই বাড়িটিকে সেই লাখোটিয়াদের কবল থেকে উদ্ধার কর...