ব্রাহ্মসমাজের উত্থান ও সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ (The Rise of the Brahmo and Sadharan Brahmo Samaj)

২১১ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রীট (বিধান সরণি) ঠিকানায় একটা বিরাট বাড়ি দেখা যায়, যার নাম 'সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ'। বাড়িটি আদতে একটি ব্রাহ্ম মন্দির। এই বাড়িটি আমরা অনেকেই দেখেছি, কিন্তু খুব ভালো করে ব্রাহ্মদের সম্পর্কে আমরা জানি না। তাই এই বাড়ি নিয়ে বলার আগে, কিছুটা জেনে নেওয়া যাক ব্রাহ্মদের বিষয়ে।



হিন্দুর মন্দিরে দেব-দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত থাকলেও বৈদিক যুগে ঈশ্বর ছিলেন ভাবময়। উপনিষদের যুগে তা আরও স্পষ্ট হল যখন ঋষি বললেন : "একমেবাদ্বিতীয়ম ব্রহ্ম", অর্থাৎ ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। চোখ যাকে দেখতে পায় না, অথচ যার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে চোখ দেখার মতাে বস্তুকে দেখতে পায় সেই শক্তিই (তিনিই) ব্রহ্ম।  সাধারণ চোখ দিয়ে যাকে দেখে ব্রহ্ম বলে উপাসনা করছ, তিনি ব্রহ্ম নন।

ক্রমে হিন্দুধর্মে পৌত্তলিকতা জায়গা করে নিল, এবং তা হয়ে উঠল নানা আচার-বিচার সর্বস্ব ক্রিয়াকর্মবহুল মানবতার ভাববিযুক্ত শুষ্ক অনুষ্ঠান মাত্র। আসল ঈশ্বরতত্ত্বই লােপ পেয়ে গেল এসব শুষ্কতার মাঝে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার ফলে মধ্যযুগে যে ভক্তি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার মূল সুর ছিল নিরাকার একেশ্বরবাদ ও মানবতাবাদ। তাঁদের দু-একজন অবশ্য সাকার ভক্তও ছিলেন।

নিরাকার ভক্তদের মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয় হলেন রামানন্দ, কবীর, গুরু নানক ও গুরু শংকরদেব প্রমূখ। ক্রমে তাদের ভাবধারার বেগ স্তিমিত হয়ে গেলে, আবার দেখা দিল শুষ্ক আচার-বিচার সর্বস্ব ধর্মব্যবস্থা। গুরু নানক তা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন শিখ ধর্ম।

পরবর্তীকালে, ইংরেজ শাসনের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবাদী ভাবধারা, এদেশের কিছু শিক্ষিত বুদ্ধিমান মানুষের মনে হিন্দুধর্মের প্রচলিত ধর্মান্ধতা ও শুষ্কতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করল। এ ভাবনাকে আরও চঞ্চল করে তুলল যুবসমাজ, এবং তারা সােচ্চার হলেন সার্বিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের জন্য। এভাবেই সূত্রপাত হল বাংলার নবজাগরণের, রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে। তিনি সচেষ্ট হলেন তাঁর একেশ্বরবাদী চিন্তার প্রতিষ্ঠা করতে (যদিও রামমোহনই যে ব্রাহ্মধর্মের প্রবক্তা, সেই নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে)।


রামমোহনের প্রতিভা, দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বদেশ চিন্তায় আকৃষ্ট হয়ে নবনগরীর অনেক ভদ্রবংশীয় বঙ্গবাসী তাঁর অনুগামী হলেন। মহাত্মা ডেভিড হেয়ারের সঙ্গেও তিনি পরিচিত হন। তিনি ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত নির্দিষ্ট ধর্মভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করার কথা ভেবে, বাড়িতে এক সভা ডাকলেন। ওই সভায় ডেভিড হেয়ারও উপস্থিত ছিলেন।

ব্রাহ্মসভার এই হল গােড়ার কথা। প্রথমদিকে তা শুরু হল আত্মীয় সভা নামে। ডেভিড হেয়ার অবশ্য রামমােহনের এ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হতে পারলেন না। তিনি বললেন, ব্রাহ্মসভার পরিবর্তে রামমােহনের উচিত দেশের নব্যযুবকদের জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ইউরােপীয় জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে তাদের শিক্ষিত করে তােলা। এর দ্বারাই দেশের প্রকৃত উপকার সাধিত হওয়া সম্ভব।  ১৮২৮ খৃস্টাব্দে তার কয়েকজন বিশেষ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রামমােহন, ফিরিঙ্গি কমল বসুর বাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সভার জন্য 'ব্রহ্মোপাসনা' নামে ছোট একটা বই ছাপা হল, যাতে মহানির্বাণতন্ত্র থেকে স্তোত্র নেওয়া হল। তাঁর আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনেকে তাঁর সঙ্গে যােগ দিলেন। ফলে লোকসংখ্যা বাড়ায়, ব্রাহ্ম সমাজের জন্য তিনি নিজস্ব মন্দির নির্মাণ করলেন চিৎপুরের বড় রাস্তার উপর। চারিদিকে তাঁর বিরুদ্ধে আলােড়ন শুরু হল। তিনি সব অগ্রাহ্য করে পাঁচশাে জন অনুগামীর সামনে ২৩শে জানুয়ারি ১৮৩০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। ট্রাস্ট ডিডে লিখেছিলেন: "The worship and adoration of One Eternal unsearchable and immutable Being who is the author and Preserver of the Universe but not under or by anyother name, designation or title and no image or picture should be admitted... a place of Public meeting of all sorts and descriptions of people without distinction. এ মন্দিরে রামমােহন মাত্র একবারই মাঘােৎসবের উপাসনায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি ১৯.১১.১৮৩০ তারিখে ইংল্যান্ড যাত্রা করেন এবং ২৭.০৯.১৮৩৩ তারিখে ব্রিস্টলে ইহলোকে ত্যাগ করেন।

এই প্রসঙ্গে ১৬.১.১৮৩০ তারিখে 'সমাচার দর্পণে' একটা খবর বের হয়।
"চিৎপুর রাস্তার ধারে নূতন ধর্মশালা:-
গত সােমবারের ইন্ডিয়া গেজেটে লেখে যে কয়েকজন গুণশালী ও ধনবান হিন্দুরা একত্র হইয়া চিৎপুরের রাস্তার ধারে জমি ক্রয় করিয়াছেন এবং ধর্মার্থে তাহাতে এক অট্টালিকা নির্মাণ করাইতেছেন। তাহার এই উীড় অর্থাৎ পাট্টায় লেখে যে ট্রাস্টিরা কেবল আদ্যন্ত রহিত জগৎ সৃষ্টি স্থিতি কর্তা ঈশ্বরের আরাধনাথে শিষ্টাচারি লােকসকলের সমাগমার্থে চিরকালের নিমিত্ত সেই অট্টালিকা রাখিবেন।
ওই পাট্টায় আরও লেখে যে সে সহরদ্দের মধ্যে কোনও প্রতিমা কি ছবি কি কোনও বস্তুর প্রতিমূর্তি কেহ লইয়া যাইতে পারিবে না এবং তাহার মধ্যে কোনও বলিদান কি নৈবেদ্যাদি উৎসর্গ করিতে পারিবে না।...এবং ট্রাস্টিরা তত্র আরাধনার্থে এক একজন বিশিষ্ট লােককে মনােনীত করিবেন এবং ওই স্থানে প্রতিদিন অথবা সপ্তাহের মধ্যে একদিন আরাধনা হইবে।" সেই মন্দির এখনো রয়েছে, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ভগ্নদশায়। হেরিটেজ ঘোষণা হলেও, এই বাড়ির কোনো সংস্কার নেই।



ইংল্যান্ড যাওয়ার আগে রাজা রামমােহন সমাজের জন্য রমানাথ ঠাকুর, বৈকুণ্ঠনাথ রায়চৌধুরী এবং নিজপুত্র রাধাপ্রসাদ রায়কে ট্রাস্টি নিযুক্ত করে যান। বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুর অর্থসাহায্যের দ্বারা তা জীবিত রাখার চেষ্টা করেন মাত্র। রাজার অনুপস্থিতি ও অবর্তমানে সমাজ অচিরে প্রাণশূন্য হয়ে যায়। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় সমাজের উপাসনা বসত। দুজন তেলেগু ব্রাহ্মণ পর্দার অন্তরাল থেকে বেদপাঠ করতেন যাতে মণ্ডলীর অব্রাহ্মণ সভ্যদের দৃষ্টিগােচর না হন। এ কারণে অব্রাহ্মণদের ওখানে থাকা নিষিদ্ধ ছিল। ওই প্রার্থনা সভায় ঈশ্বরের রামরূপ পরিগ্রহ করে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করা নিয়েও প্রবচন প্রচারিত হত।

এমন পরিস্থিতিতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজে প্রাণের সঞ্চার করতে সচেষ্ট হলেন। ১৮৪৩-১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমাজের যুব সদস্যরা ব্রহ্মবাদের ভিত্তি প্রসারিত করতে সচেষ্ট হলেন, কিছু সামাজিক আদর্শ প্রচার ও ধর্মবিশ্বাসের উপর যুক্তি বিচারের প্রতিফলন ঘটিয়ে। তাঁরা নারী শিক্ষা ও বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে প্রচারে নামলেন, এবং মদ্যাসক্তি ও পুরুষের বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে সােচ্চার হলেন। এনারা মণ্ডলীর কাজকর্ম নির্দিষ্ট অনুশাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত করতে চাইলেন।

এই দলের নেতৃত্ব দিলেন কেশবচন্দ্র সেন। তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে যােগ দিয়েছিলেন এবং ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে আচার্য পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের প্রচারিত অত্যাধুনিক আদর্শ প্রচার নিয়ে নবীন ও প্রবীণদেরমধ্যে তুমুল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হল। এমন পরিস্থিতিতে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সমাজের যুব সদস্যরা কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে ব্রাহ্মসমাজ পরিত্যাগ করে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ (The Brahmo Samaj of India) প্রতিষ্ঠা করলেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামমােহন রায় নির্দেশিত পথেই রয়ে গেলেন।



এই বিভাজনের পরে রামমােহন প্রতিষ্ঠিত সমাজ 'আদি ব্রাহ্মসমাজ' নামে খ্যাত হল। আদি সমাজ উচ্চকণ্ঠে প্রচার করল "Brahmosim is Hinduism"। তার উত্তরে কেশব সেনের দল প্রচার করল "Brahmoism is Catholic and Universal"। কেশব সেন ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী ও সংগঠক। তাঁর বলিষ্ঠ সাংগঠনিক প্রতিভার গুণে সমগ্র ভারতবর্ষে ব্রাহ্মধর্ম শক্তিশালী হয়ে উঠলো। তাঁরই অনুরােধে ভারত সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাশ করলো।

কেউ বিবাহকালীন বিজ্ঞপ্তি : Not a Hindu not a Mussalman not a Christian দিলেই এ আইন অনুযায়ী এমন বিবাহ আইনানুগভাবে নথিভুক্ত করা হত। কিন্তু হটাৎ কেশবচন্দ্রের এক বিপ্লবাত্মক চিন্তায়, এক দুর্জেয় পরিণাম ঘটল। কেশবচন্দ্র সেন তাঁর নাবালিকা কন্যার সঙ্গে কুচবিহারের নাবালক রাজকুমারের হিন্দুমতে শালগ্রাম শিলা সাক্ষী রেখে বিবাহ সম্পাদন করলেন। তদুপরি স্ত্রী স্বাধীনতা বিষয়ে ওই সমাজের প্রগতিশীল যুবগাষ্ঠীর সঙ্গে কেশব সেনের মতবিরােধ দেখা দিল। ফলে সমাজ পরিচালনার নিয়মতন্ত্রপ্রণালী নিয়েও কেশবচন্দ্রের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ আসন্ন হয়ে পরল।

নবীন প্রগতিশীলরা শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে 'সমদর্শী দল' গঠন করলেন। তাদের প্রচারের বিষয় ছিল স্ত্রী স্বাধীনতা, জাতিভেদ প্রথা বিলােপ, স্ত্রীশিক্ষার বিস্তার ইত্যাদি। শিবনাথ শাস্ত্রীর লেখা থেকে জানা যায় : "এই সকল বিবাদের মধ্যে কেশববাবুর ভাব দেখিয়া আমরা দুঃখিত হইতে লাগিলাম। তিনি সমদর্শী দলকে লক্ষ্য করিয়া 'রবিবাসরীয় মিররে' স্কেপটিস্ট, সেকুলারিস্ট, আনরিলিজিয়াল প্রভৃতি কটুক্তি বর্ষণ করিতে লাগিলেন। আমি দুঃখিত হইয়া ওই মিররে ইহার প্রতিবাদ করিলাম। অতঃপর সংবাদপত্রের এই সকল উক্তি, প্রত্যুক্তি, সমদর্শীর লেখা ও যুবক ব্রাহ্মদলের মধ্যে কেশববাবুর আদর্শ সম্বন্ধে নানা আলােচনা, উপহাস, বিদ্রপ প্রভৃতির দ্বারা কেশববাবুর অনুগত প্রবীণ ব্রাহ্মদল ও যুবক ব্রাহ্মদলের মধ্যে চিন্তা ও ভাবগত বিচ্ছেদ দিন দিন বাড়িতে লাগিল। ...পূর্ণ বিচ্ছেদের ইন্ধন জোগাল তাঁর নাবালিকা কন্যার কুচবিহারের নাবালক রাজকুমারের সঙ্গে হিন্দুমতে বিবাহ। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল। ব্রাহ্মসমাজ পুনরায় দ্বিতীয়বারের মত বিভক্ত হল। ঈশ্বর উপাসনার প্রয়ােজনে নবীনরা প্রতিষ্ঠা করলেন তাঁদের নিজস্ব মন্দির। তাঁদের সমাজের নাম হল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ।"



এই হলো 'সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ' প্রতিষ্ঠার পিছনে ইতিহাস। এবার 'সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ' প্রতিষ্ঠার কথা ঘােষণা করলেও, এই সমাজের সদস্যদের উপাসনার কোনও স্থান আর রইল না। এ কারণে তাঁরা ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মাসমাজের বাড়িটির পাশে, ডা. উপেন্দ্রনাথ বসুর ঠাকুরদালানে কিছুদিন তাঁদের সাপ্তাহিক উপাসনা চালান। তারপর বেনিয়াটোলা লেনস্থিত একটি বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে ওখানে তাঁদের উপাসনা তুলে আনেন। অবশেষে, নিজস্ব উপাসনা মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের উপর ২১১ নম্বর জমি পছন্দ করলেন, কিন্তু তার জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? একাজের জন্য মহর্ষির দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চাঁদা চাইলে, তিনি শিবনাথ শাস্ত্রীর হাতে ৭০০০ টাকার চেক লিখে দেন। বাকি টাকা সংগ্রহ ও মন্দির নির্মাণের দায়িত্ব নিলেন গুরুচরণ মহলানবিশ ও শিবনাথ শাস্ত্রী। তারা চাঁদা তােলার জন্য বিহার, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, পাঞ্জাব ও মধ্যভারত পরিভ্রমণ করে বহু টাকা সংগ্রহ করেন। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত ২১১ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের জমি অবশেষে কেনা সম্ভব হল, এবং ২৩শে জানুয়ারি ১৮৭৯ খৃস্টাব্দে মাঘোৎসবের দিনে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন শিবচন্দ্র। বিনা পারিশ্রমিকে মন্দিরের নকশা তৈরি করে দিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার নীলমণি মিত্র। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের মাঘােৎসব নবনির্মিত মন্দিরেই সম্পন্ন হল।


মন্দির নির্মাণে মােট খরচ হয়েছিল ৪৫০০০ টাকা। ২২.০১.১৮৮১ তারিখে (১০ই মাঘ) মন্দিরের দ্বার উদ্যাটন করেছিলেন বৃদ্ধ শিবচন্দ্র। মন্দিরটির পিছনে পূর্বদিকে মাঠ, তারপর দোতলা বাড়ি যার নাম 'শিবনাথ স্মৃতি ভবন'। তার একতলায় সাধনাশ্রম, দোতলায় মহিলাশ্রম। মন্দিরের দক্ষিণ সীমায় দোতলায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরি। মন্দিরের ওপরে গোলাকৃতির একটি বাস্তুকলা শােভিত যা গােলাকার স্তম্ভপুঞ্জের উপর দাড়িয়ে আছে। এছাড়াও মন্দিরের নীচে রয়েছে ব্রাহ্ম মিশন প্রেস ও অফিস। এখনো এই মন্দিরে নিয়মিত উপাসনা করা হয়।

সময়ের সাথে সাথে যদিও ব্রাহ্মধর্মের প্রভাব অনেকটাই কমে এসেছে, তাও বলা যায় এই মন্দিরটি এখনো এই ধর্মের মশাল জ্বালিয়ে রেখেছে।

তথ্যসূত্র:
১. thebrahmosamaj.net/
২. britannica.com/topic/Brahmo-Samaj
৩. indianexpress.com/article/research/celebrating-the-essence-of-hinduism-how-19th-century-brahmo-samaj-altered-bengali-society-7277307/
৪. telegraphindia.com/culture/being-tolerant-the-bengali-way-rise-and-fall-of-the-brahmo-samaj/cid/1699071
৫. আত্মচরিত - শিবনাথ শাস্ত্রী
৬. prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%8D%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C
৭. bengali.indianexpress.com/feature/kolkata-heritage-building-sadharan-brahmo-samaj-143160/

Comments

  1. আপনার লেখাটি ভাল। তবে রামমোহনের সময় প্রথমে শনিবারে ব্রহ্মপাসনা শুরু হলেও পরে তা বুধবারে পরিবর্তিত হয়। সেই থেকে বুধবারে সমাজ হত - যা এখনো শান্তিনিকেতনে বর্তমান।
    রামমোহন ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা, কারণ ট্রাস্ট ডীডে লেখা ছিল The Trust Deed Of The Brahmo Samaj যেটা আপনি www.thebrahmosamaj.net/samajes/trustdeed.html এ পাবেন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)