গুরুদুয়ারা বড়া শিখ সঙ্গত, বড়বাজার (Gurudwara Bara Sikh Sangat)
কোলকাতা হলো এমন একটা শহর, যেখানে অনেক রকমের ধর্মের লোকজন মিলেমিশে থাকে। সেরকমই হলেন শিখরা। ওনাদের প্রতিষ্ঠিত অনেক গুরুদুয়ারা সারা কোলকাতা জুড়ে রয়েছে। তবে সেগুলোর মধ্যে, সবথেকে বড়ো এবং সবথেকে পুরোনোটি রয়েছে আমাদের বড়োবাজার এলাকাতে।
১৭২, এম. জি. রোড, বড়োবাজার। এখানে রয়েছে কোলকাতার সবথেকে পুরোনো গুরুদুয়ারা বড়া শিখ সঙ্গত। তুলাপট্টি এই জায়গাটার নাম। এক ছুটির সকালে, কুদঘাট থেকে প্রথম মেট্রো ধরে, আমি নেমেছিলাম এম. জি. রোডে। সেখান থেকে এক কিলোমিটার মতো হেঁটে পৌঁছালাম এই গুরুদুয়ারা।
সামনের রাস্তাটা এতো ভিড়, যে মাথা তুলে ভালো করে দেখাই যায় না গুরুদুয়ারাটা। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে, দেওয়ালে সংক্ষিপ্তভাবে লেখা রয়েছে এখানকার ইতিহাস। পূর্বভারতের তার ভ্রমণের সময়, গুরু নানক ১৫১০ সালের ২রা জানুয়ারী, কোলকাতাতে আসেন। যে জায়গাটায় তিনি ছিলেন তার নাম ছিল 'বান সঙ্গত'। এখানে তখন প্রবল মহামারীর প্রকোপ চলছিল। গুরুজী এখানে ১২ দিন থেকে সবার সেবা-শুশ্রূষা করেন, আর তারপর জগন্নাথধামের দিকে রওয়ানা হন। এই 'বান সঙ্গত' -এ, এই গুরুদুয়ারাটি স্থাপন করেন মহারাজা বাহাদুর সিং।
পরবর্তীকালে ১৬৬৮ সালের এপ্রিল মাসে শিখদের নবম গুরু শ্রী তেগ বাহাদুর এখানে আসেন। তিনিও গুরু নানকের বাণী প্রচার করেন। তিনি এখানে সাপ্তাহিক সৎসঙ্গের এবং লঙ্গর খোলার নির্দেশ দেন, যা এখনো পালন হয়ে চলেছে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে, প্রথমেই পড়বে প্রার্থনাস্থল। জায়গাটি সত্যি চোখ জুড়িয়ে যাবার মতো, আর ধর্মীয় সংগীত গাওয়া হচ্ছে মঞ্চ করে। পাশে রয়েছে একটি নাগাড়া (ঢাকের মতো দেখতে বাদ্যযন্ত্র)। আমি বেদিতে প্রণাম জানিয়ে, প্রসাদ নিলাম। প্রসাদ হলো গরম গরম হালুয়া, কি যে ভালো খেতে!
ওখান থেকে বেরিয়ে আমি আরো উপরতলাতে গেলাম, লঙ্গরের প্রস্তুতি দেখতে। দেখলাম, শিখ মহিলারা বসে এত্তো আটা মাখছেন, আর পাশে রয়েছে টেবিলের মতো বড়ো তাওয়া। রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম, বিশাল এক কড়াইতে জোরদার রান্না হচ্ছে!
সব দেখে, নেমে এলাম নীচে। এই জায়গাটার পরিবেশ এত স্নিগ্ধ, যে মন এক অনাবিল আনন্দে ভরে যায়। তার উপরে হালুয়া খেয়ে, আরো খিদে পেয়ে গেল! আমি একটা চায়ের দোকানে মালাই টোস্ট খেলাম! ভাবাই যায় না, বড়োবাজারের মতো হৈ হট্টগোলের জায়গাতে, এরকম শান্তির একটা জায়গা থাকতে পারে...
Comments
Post a Comment