Posts

Showing posts from 2022

কলকাতা ঘোড়সওয়ার পুলিশের সংগ্রহশালা (The Kolkata Mounted Police Museum)

Image
কলকাতার ময়দান অঞ্চলে গেলে দেখা যায়, ঘোড়ায় চড়ে কিছু খাকি ইউনিফর্ম পরা পুলিশ টহল দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এনাদের ঘোড়সওয়ার পুলিশ বা Mounted Police বলা হয়। কোলকাতা কর্পোরেশনের বিল্ডিঙের উল্টোদিকে, এস. এন. ব্যানার্জি রোডে আছে এনাদের সদর দপ্তর। ইতিহাস ঘাঁটলে পাওয়া যায়, ঘোড়সওয়ার পুলিশ দপ্তরের জন্ম হয়েছিল ১৮৪০ সাল নাগাদ, ব্রিটিশদের হাতে। তখন একজন দফাদারের (Head Officer) অধীনে ছিলেন দুজন ঘোড়সওয়ার, যাদের কাজ ছিল দূরে নদীতে কোনো জাহাজ দেখা গেলে, ঘোড়া ছুটিয়ে গিয়ে হারবার মাস্টারকে খবর দেওয়া। ১৮৪২ সালের থেকে ময়দান এলাকাটি টহল দেবার জন্য এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পত্তনের সময় থেকে শুধু দেশীয় লোকেরাই এখানে চাকরি পেতেন, কিন্তু ১৯০৫ সালে এই দলে পাঁচজন ইউরোপিয়ান কনস্টেবলকে নেওয়া হয়েছিল, শহরের অন্যান্য জায়গাতেও টহল দেবার জন্য। তখন পুরো বাহিনী ছিল ২০ জন সদস্যের। স্বাধীনতার পরে ধীরে ধীরে আরো বড়ো হতে থাকে এই বাহিনী। বর্তমানে এখানে আছেন একজন ইন্সপেক্টর, একজন সার্জেন্ট মেজর, ১২ জন সার্জেন্ট, একজন জে সি ও, ৫ জন সর্দার ঘোড়সওয়ার, ৮৫ জন ঘোড়সওয়ার এবং ৯৮ জন সহিস। এনাদের ইউনিফর্ম হ

টোবি মগ : একটা সুন্দর বাসনের নেপথ্যের গল্প (Toby Mugs and the History of it)

Image
কলকাতার পুরনো নিলামঘরগুলোতে উঁকি মারলে মাঝে মধ্যে কিছু খুব সুন্দর জিনিষ দেখতে পাওয়া যায়। এরকমই কিছু Toby Mugs আমি দেখেছিলাম পার্ক স্ট্রিটের মেহেরাদের নিলাম ঘরে। জিনিসগুলো আমার এতটাই সুন্দর লেগেছিল, আমি এগুলো নিয়ে আমার কিছু সংগ্রাহক বন্ধুদের সাথে কথা বলি, এবং জানতে পারি এদের সম্পর্কে। এদের সাইজ ও গঠনরীতি অনুযায়ী Toby Jugs বা Toby Mugs বলা হয়ে থাকে। জগ ঢালা জন্য ব্যবহার করা হয়; মগ পান করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো তৈরি হয় ফিগারাল সিরামিক পিচার দিয়ে, যা একটি জনপ্রিয় চরিত্র, ঐতিহাসিক, কাল্পনিক বা জেনেরিক আকারে তৈরি ( ব্যক্তি বা প্রাণী)। মোটামুটি ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দের সময় থেকে ইংল্যান্ডে এগুলো বানানো শুরু হয়। Toby নামটা কিভাবে এলো, সেটা নিয়ে নানান অভিমত রয়েছে। প্রথমতঃ , সেটা হলো শেক্সপিয়রের নাটক, টুয়েলফথ নাইটের স্যার টবি বেলচের চরিত্রের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল। এটি ফরাসি শব্দ "টোপে" থেকে এসেছে। দ্বিতীয়তঃ, এটি অষ্টাদশ শতকের ইয়র্কশায়ারের কুখ্যাত মদ্যপানকারী হেনরি এলওয়েসের নামে নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি "টবি ফিলপট

বাবা পঞ্চানন্দদেবের মন্দির, খিদিরপুর (Baba Panchananda Dev Temple, Kidderpore)

Image
খিদিরপুর অঞ্চলটি অনেক প্রাচীন, তাই সেখানে রয়েছে অনেক পুরনো মন্দির। খালের ওপরে ব্রিজ পেরিয়ে খিদিরপুর ঢুকতে, ১বি কবিতীর্থ সরণি ঠিকানায় দেখা যায় মাঝারি সাইজের একটা শিবমন্দির। মন্দিরের চূড়াতে একটি শিবমূর্তি খোদিত আছে। এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত আছেন বাবা পঞ্চানন্দদেব। তবে এই মন্দিরের ইতিহাস পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। জনশ্রুতি থেকেই কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়। আদিগঙ্গা তখন আরও চওড়া ছিল। পরে মজে গিয়ে দূর সরে গেছে। সে সময় এ অঞ্চল ছিল সুন্দরবনের অংশ। কিংবদন্তী আছে, আনুমানিক প্রায় তিনশো বছর আগে খিদিরপুর সোনাই নিবাসী তারিণীচরণ চক্রবর্তীর পূর্বপুরুষদের অন্যতম জনৈকা নারী, একদিন বর্তমান মন্দির সংলগ্ন পথ দিয়ে কালীঘাট অভিমুখে যাচ্ছিলেন। তার হাতে ছিল সুতোর বোঝা, বা সুতোর নুটি। তখন ঘরে ঘরে তৈরি হতো এসব নুটি। কাছে-পিঠের হাটে-গঞ্জে এগুলি বিক্রি হত। মহিলাটির উদ্দেশ্য ছিল, চেতলার হাটে সুতো বিক্রি করা (এর থেকে বোঝা যায়, চেতলার হাট কতটা পুরনো)। এই মন্দিরপথের কাছে আসামাত্র একটি সৌম্য বালক কোথা থেকে ছুটে এসে, সেই নারীর কাছে বায়না জুড়ে দিল মোয়া খাওয়ার জন্য। তিনি কথা দিলেন ফ

শ্রী শ্রী ভুবনেশ্বর ও শ্রী শ্রী রামেশ্বর শিব মন্দির, কালীঘাট (Sri Sri Bhubaneswar and Sri Sri Rameswar Shiv Temple, Kalighat)

Image
কালীঘাট মন্দিরটির খুব কাছেই ৬০, ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রীটে রয়েছে এক জোড়া শিবমন্দির, যা চারদিকের দোকান ও বাড়ির জন্য খুব ভালো করে রাস্তা থেকে দেখা যায় না। মন্দিরদুটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন ধনী ব্যবসায়ী শ্রী বৈদ্যনাথ হালদার, মোটামুটি ১৭৫০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। মন্দিরদুটির সামনে রয়েছে একটি সংকীর্ণ উঠোন। মন্দিরদুটিতে দুটো শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত, যাদের নাম যথাক্রমে শ্রী শ্রী ভুবনেশ্বর শিব ও শ্রী শ্রী রামেশ্বর শিব। এই লিঙ্গদুটি উড়িষ্যা থেকে বানিয়ে, নদীপথে আনা হয়েছিল। মন্দিরের গায়ে হয়তো কোনো সময়ে টেরাকোটার কাজ থাকতে পারে, কিন্তু বার বার সংস্কারের ফলে সেই কাজ আজ বিলুপ্ত। মন্দিরের ভিতরে এই সংস্কারের কয়েকটি ফলক এখনো রয়েছে। দিনে দুবার এই মন্দিরে পুজো হয়, বাকি সময়ে গেট বন্ধ থাকে। স্থানীয় কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়ে এই উঠোনে খেলে, তাদের সাহায্য নিয়েই আমি এই মন্দিরদুটো দেখলাম। বিশেষ তথ্য সহায়তা: কিঞ্জল বোস 

রানাঘাট: নামকরণ, পালচৌধুরী বাড়ি এবং জোড়া শিব মন্দির (Ranaghat: Naming, Palchowdhury House and Twin Shiv Temples)

Image
রানাঘাট নামটা শুনলে আমার যে কথাটা প্রথম মাথায় ভেসে ওঠে, সেটা হলো ছানার জিলিপি এবং পান্তুয়া! কিন্তু ঐতিহাসিক দিক থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এই শহর। নদীয়া জেলার একটি মহকুমা শহর রানাঘাটের নামকরণের পিছনে রয়েছে বেশ দুটি যুক্তি। ১. পূর্বে এখানে 'রণা/রানা' নামের একজন ডাকাতের খুব উৎপাত ছিল। তার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মূর্তি এখনো পূজিত হয়। তাই ডাকাতের নামে এই অঞ্চলের নাম রানাঘাট। ২. রানা মানসিংহ, একবার যশোর (বর্তমানে বাংলাদেশে) যাবার পথে, এই অঞ্চলে চূর্ণী নদীর তীরে একটি ঘাটে অবতরণ করেন। রানার অবতরণের ঘাট, এই থেকে অঞ্চলের নামকরণ হয় রানাঘাট। রানাঘাটের নাম বিখ্যাত হয় পালচৌধুরি পরিবারের জন্য। এদের এক পূর্বপুরুষ কৃষ্ণ পান্তি (১৭৪৯ - ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) খুব সাধারণ অবস্থা থেকে, ব্যবসা করে অনেক ধনসম্পত্তি করেন, এবং রানাঘাটে প্রচুর জায়গা কিনে নিজেদের জমিদারির পত্তন করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের থেকে পান 'পালচৌধুরি' পদবী। এনার উত্তরপুরুষরা রানাঘাট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন অনেক মন্দির, ঘাট এবং স্কুলের। আজকের দিনে কিন্তু পালচৌধুরিদের বিরাট সাম্রাজ্যের বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই। শরি

রিষড়ার শ্রীমানি বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja of Srimani Family of Rishra, Hooghly)

Image
হুগলী অঞ্চলে অনেকগুলো বনেদি বাড়িতে দুর্গাপূজা হয়, আর তার মধ্যে অনেকগুলোই বিখ্যাত হয়ে উঠেছে মিডিয়ার কল্যাণে। কিন্তু কিছু এমন পুরনো বাড়ি রয়েছে, যার পুজো নিষ্ঠা মেনে হলেও, এখনো সেরকম মিডিয়ার নজর পরে নি। এরকমই একটি বাড়ি হলো হুগলীর গঙ্গাপাড়ের জনপদ রিষড়ার শ্রীমানি পরিবারের দুর্গাপুজো। ভাগ্যের সন্ধানে শ্রীমানি পরিবারের বাস এখানে শুরু হয় মুসলিম আমলের শেষের দিক থেকে। এনারা মাকরদহের শ্রীমানিদেরই সরাসরি আত্মীয়। পরিবারের উল্লেখযোগ্য পুরুষ হিসেবে নাম পাওয়া যায় শ্রী কৃষ্ণচন্দ্র শ্রীমানির, যিনি এই অঞ্চলের কিছু উন্নতিসাধন করেছিলেন, যার মধ্যে শ্রীমানি ঘাট এখনো বিদ্যমান। পূর্বে এই ঘাট দিয়েই নৌকা চলাচল করতো, পরে একটু পাশে সমশানের গা ঘেঁসে নতুন ফেরিঘাট বানানো হয়।  সেই সময়, কৃষ্ণচন্দ্র শ্রীমানির আমলে বা তার পিতার তত্ত্বাবধানে পরিবারে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। সেই সূত্রে পুজোর বয়স প্রায় ৩০০ বছর। তবে যথাযথ প্রথা অনুসারে পুজো শুরু হয় কৃষ্ণচন্দ্রের স্ত্রীর আমলে। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় পর্দাপ্রথার বাড়াবাড়ি থাকলেও, এই পুজোকে তা স্পর্শ করেনি। মহিষাসুর

ইডেন গার্ডেন এবং বার্মিজ প্যাগোডা (Eden Garden and Burmise Pagoda)

Image
কলকাতার বিখ্যাত ক্রিকেট স্টেডিয়াম হলো ইডেন গার্ডেনস। অনেক ইতিহাস তৈরী হয়েছে এখানে। এর পাশেই রয়েছে একটি বিরাট সুসজ্জিত বাগান, যারও নাম একই! অনেকেই কিন্তু জানেন না, এই বাগানের নামেই কিন্তু স্টেডিয়ামের নাম রাখা! বাগানটার ইতিহাস নিয়েই বলবো আজকে। অবিভক্ত ভারতের গভর্ণর জেনারেল হিসেবে জর্জ ইডেন তথা লর্ড অকল্যান্ড ১৮৩৬ - ১৮৪২ সাল পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওনার দুই বোনের নাম ছিল এমিলি ও ফ্যানি ইডেন, যারা দাদার কাছে কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলেন। রাজভবনে এসে উঠলেও, রোজ দুই বোন নদীর ধারে সান্ধ্যভ্রমণে বেরোতেন। এমিলি বাগান করতে ভালোবাসতেন, এবং তার মধ্যে ছিল শিল্পী সত্ত্বা। তাই বোনদের কথায়, এই জায়গাতে বাগান তৈরির মনস্থ করেন লর্ড অকল্যান্ড। জনশ্রুতি আছে, এই জমিটি ছিল রানী রাসমণির। বিখ্যাত আর্কিটেক্ট ক্যাপ্টেন ফিজগেরাল্ডের তত্ত্বাবধানে ও নকশায়, এই বাগানের কাজ সম্পূর্ণ হয় ১৮৪০ সালে। বাগানের নাম প্রথমে রাখা হয়েছিল 'অকল্যান্ড সার্কাস গার্ডেন', কিন্তু সময়ের সাথে সাথে লোকমুখে বাগানের নাম বদলে হয়ে যায় ' ইডেন গার্ডেন'।