বাবা পঞ্চানন্দদেবের মন্দির, খিদিরপুর (Baba Panchananda Dev Temple, Kidderpore)

খিদিরপুর অঞ্চলটি অনেক প্রাচীন, তাই সেখানে রয়েছে অনেক পুরনো মন্দির। খালের ওপরে ব্রিজ পেরিয়ে খিদিরপুর ঢুকতে, ১বি কবিতীর্থ সরণি ঠিকানায় দেখা যায় মাঝারি সাইজের একটা শিবমন্দির। মন্দিরের চূড়াতে একটি শিবমূর্তি খোদিত আছে।


এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত আছেন বাবা পঞ্চানন্দদেব। তবে এই মন্দিরের ইতিহাস পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। জনশ্রুতি থেকেই কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়। আদিগঙ্গা তখন আরও চওড়া ছিল। পরে মজে গিয়ে দূর সরে গেছে। সে সময় এ অঞ্চল ছিল সুন্দরবনের অংশ।


কিংবদন্তী আছে, আনুমানিক প্রায় তিনশো বছর আগে খিদিরপুর সোনাই নিবাসী তারিণীচরণ চক্রবর্তীর পূর্বপুরুষদের অন্যতম জনৈকা নারী, একদিন বর্তমান মন্দির সংলগ্ন পথ দিয়ে কালীঘাট অভিমুখে যাচ্ছিলেন। তার হাতে ছিল সুতোর বোঝা, বা সুতোর নুটি। তখন ঘরে ঘরে তৈরি হতো এসব নুটি। কাছে-পিঠের হাটে-গঞ্জে এগুলি বিক্রি হত। মহিলাটির উদ্দেশ্য ছিল, চেতলার হাটে সুতো বিক্রি করা (এর থেকে বোঝা যায়, চেতলার হাট কতটা পুরনো)।


এই মন্দিরপথের কাছে আসামাত্র একটি সৌম্য বালক কোথা থেকে ছুটে এসে, সেই নারীর কাছে বায়না জুড়ে দিল মোয়া খাওয়ার জন্য। তিনি কথা দিলেন ফিরতি পথে মোয়া খাওয়াবেন। প্রতিশ্রুতিমত, তিনি সেই বালককে মোয়া খাওয়ালেন। সেই বালকও মহাপরিতুষ্ট হয়ে এ নারীর কোলে চেপে খানিক পথ এল। আর সামনের এক অশ্বত্থ গাছের নিচে নেমে, কোথায় যেন চলে গেল।

কয়েকদিন পরে, সেই নারী পঞ্চানন্দদেবের দ্বারা স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে জানতে পারেন সেই বালকটি স্বয়ং 'বাবা পঞ্চানন্দদেব'। তিনি কাছেই গঙ্গাবক্ষে 'ঘট' রূপে রয়েছেন। তিনি পরদিন ঘটটি তুলে সেই অশ্বত্থতলায় স্থাপন করেন। জনমুখে বাবার মাহাত্ম্য প্রচারিত হয় এবং এই পঞ্চানন্দতলা বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

কিছু বছর পরে ভূকৈলাসের দেওয়ান গোকুল ঘোষাল পঞ্চানন্দের থান তৈরি করান ১৭৭০-৭২ সাল নাগাদ (বাংলা ১১৭৬-৭৮ সন)। সম্ভবত বর্তমান মূর্তিটিও তার উদ্যোগেই বানানো। তারপর অনেকবারই বিভিন্নজনের উদ্যোগে মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে।

এবারে আসা যাক মন্দিরের বর্ণনায়। মন্দিরের লোগোয়া রয়েছে একটি নাটমন্দির। মূল মন্দিরের কেন্দ্রে রয়েছেন বাবা পঞ্চানন্দ। তার আশেপাশে চণ্ডী ও অন্যান্য দেবী রয়েছেন। আর এই মূল মন্দিরের পাশে ডান দিকে তৈরি হয়েছে আরেকটি একই রীতিতে বানানো মন্দির, যেখানে একটি কালীমূর্তি ও শনিদেবের মূর্তি রয়েছে। এরই পাশে বানানো হয়েছে একটি আটচালা মন্দির, যেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি শিবলিঙ্গের।




সময়ের সাথে অনেক দেবদেবী বিরাজমান হলেও, মন্দিরটির খ্যাত 'পঞ্চাননতলা' নামেই। আজও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন বাবার কাছে, তাদের অপূর্ণ মনস্কামনা নিয়ে। বিভিন্ন তিথিতে বেশ বড়ো করে এখানে অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র: ইতিহাসে খিদিরপুর - সমর দত্ত

Comments

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)