রানাঘাট: নামকরণ, পালচৌধুরী বাড়ি এবং জোড়া শিব মন্দির (Ranaghat: Naming, Palchowdhury House and Twin Shiv Temples)
রানাঘাট নামটা শুনলে আমার যে কথাটা প্রথম মাথায় ভেসে ওঠে, সেটা হলো ছানার জিলিপি এবং পান্তুয়া! কিন্তু ঐতিহাসিক দিক থেকেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় এই শহর। নদীয়া জেলার একটি মহকুমা শহর রানাঘাটের নামকরণের পিছনে রয়েছে বেশ দুটি যুক্তি।
১. পূর্বে এখানে 'রণা/রানা' নামের একজন ডাকাতের খুব উৎপাত ছিল। তার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মূর্তি এখনো পূজিত হয়। তাই ডাকাতের নামে এই অঞ্চলের নাম রানাঘাট।
২. রানা মানসিংহ, একবার যশোর (বর্তমানে বাংলাদেশে) যাবার পথে, এই অঞ্চলে চূর্ণী নদীর তীরে একটি ঘাটে অবতরণ করেন। রানার অবতরণের ঘাট, এই থেকে অঞ্চলের নামকরণ হয় রানাঘাট।
রানাঘাটের নাম বিখ্যাত হয় পালচৌধুরি পরিবারের জন্য। এদের এক পূর্বপুরুষ কৃষ্ণপান্তি (১৭৪৯ - ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) খুব সাধারণ অবস্থা থেকে, ব্যবসা করে অনেক ধনসম্পত্তি করেন, এবং রানাঘাটে প্রচুর জায়গা কিনে নিজেদের জমিদারির পত্তন করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের থেকে পান 'পালচৌধুরি' পদবী। এনার উত্তরপুরুষরা রানাঘাট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন অনেক মন্দির, ঘাট এবং স্কুলের।
১. পূর্বে এখানে 'রণা/রানা' নামের একজন ডাকাতের খুব উৎপাত ছিল। তার প্রতিষ্ঠিত একটি কালী মূর্তি এখনো পূজিত হয়। তাই ডাকাতের নামে এই অঞ্চলের নাম রানাঘাট।
২. রানা মানসিংহ, একবার যশোর (বর্তমানে বাংলাদেশে) যাবার পথে, এই অঞ্চলে চূর্ণী নদীর তীরে একটি ঘাটে অবতরণ করেন। রানার অবতরণের ঘাট, এই থেকে অঞ্চলের নামকরণ হয় রানাঘাট।
রানাঘাটের নাম বিখ্যাত হয় পালচৌধুরি পরিবারের জন্য। এদের এক পূর্বপুরুষ কৃষ্ণপান্তি (১৭৪৯ - ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) খুব সাধারণ অবস্থা থেকে, ব্যবসা করে অনেক ধনসম্পত্তি করেন, এবং রানাঘাটে প্রচুর জায়গা কিনে নিজেদের জমিদারির পত্তন করেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের থেকে পান 'পালচৌধুরি' পদবী। এনার উত্তরপুরুষরা রানাঘাট অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেন অনেক মন্দির, ঘাট এবং স্কুলের।
আজকের দিনে কিন্তু পালচৌধুরিদের বিরাট সাম্রাজ্যের বিশেষ কিছু অবশিষ্ট নেই। শরিকি মামলায় জর্জরিত হয়ে জমিদারবাড়ি অনেকগুলো টুকরো হয়ে গেছে। দুর্গাদালানেরও খুব একটা ভালো অবস্থা নয়। আমি প্রথমবার গিয়ে সব মন্দির বন্ধ অবস্থায় পেলাম, যদিও আমি বেশ সকালেই গিয়েছিলাম। সবথেকে মজার অভিজ্ঞতা হলো জমিদারবাড়ি গিয়ে। কাছারিঘরে ডেকরেটর কোম্পানির চেয়ার স্তূপ করে রাখা, তার সাথে রয়েছে বোতলবন্দী পানীয় জলের বেশ কয়েকটি ক্রেট। একজন কাউকে দেখলাম না, যাকে ধরে আমি কিছু কথা জিজ্ঞাসা করবো! নিজের মতোই ঘুরে ফিরে চলে এলাম।
জমিদারবাড়ির সামনের বাগানটি এখন হয়েছে একটি বাচ্চাদের পার্ক, তার মধ্যে দিয়েই বাড়িতে ঢোকার রাস্তা। মূল প্রবেশপথের ফটকের দুপাশে রয়েছে দুটি লোহার তৈরি মাঝারি মাপের কামান, যায় সঠিক সংরক্ষণ হচ্ছে না। কৃষ্ণপান্তির ছোট ভাই শম্ভুচন্দ্রের বজরাতে ছিল এই কামানদুটি, বয়স মোটামুটি ২০০ বছরের মতো। মূল ফটক দিয়ে ঢুকে, পরে একটি বিস্তীর্ণ উঠোন। আগে এখানে বাগান থাকলেও এখন শুধুই জঙ্গল, আর দেখা যায় একটি পরিত্যক্ত ফোয়ারার ধ্বংসাবশেষ।
কাছারি ঘরের ভিতরে রয়েছে কাঁচের বাক্সে একটি বিরাট চিতাবাঘের স্টাফড শরীর (৭ ফিট ২ ইঞ্চি), যাকে রানাঘাটের দেবগ্রামে মেরেছিলেন শ্রী কে. সি. পালচৌধুরী (২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে)। পাশের দেওয়ালে রয়েছে সেই ছবি, কিন্তু ফটোগ্রাফটি নষ্ট হবার মুখে।
এই বাড়ির ঢোকার উল্টোদিকে দেখলাম রয়েছে একটি পরিত্যক্ত মন্দির, যার গেটের গ্রিলে লেখা আছে গিন্নি মা। যথারীতি এখানেও সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। এবার রাস্তায় পথচারীদের এবং দোকানদারদের সাহায্য নিয়ে পৌঁছালাম রানাঘাট রোড। সেখানে হ্যাপি ক্লাব নামের একটা ক্লাবের মাঠের পাশেই দেখলাম ভাঙাচোরা দোতলা একটি মিনারের মতো, যাকে স্থানীয় লোকজন গোলঘর নামে ডাকলেও, আমার এটিকে নহবতখানা অথবা ওয়াচ টাওয়ার মনে হলো।
এরপরে আবার স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে করতে পৌঁছালাম পালচৌধুরীদের দুর্গাদালানের কাছে, যায় পাশেই আছে একই ভিত্তিবেদীর ওপরে দক্ষিণমুখী এক জোড়া আটচালা শিবমন্দির। মন্দিরদুটির শুধু সামনের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। এই মন্দিরগুলোর নিয়মিত সংস্কার হয়, যদিও বার বার চুনকাম করার ফলে টেরাকোটার কাজের বেশ ক্ষতি হয়েছে। মন্দিরগুলোতে আছে টেরাকোটার হংসপংক্তি, ফুলকারির নকশা, দশভূজা ও কালিমূর্তি। এছাড়া রয়েছে ৯টি প্রতীকী শিবমন্দির, নকশি লতা, এবং পদ্মফুল। দুই পাশের দেওয়ালের কুলুঙ্গিতে সাজানো আছে অনেক দেবদেবীর মূর্তি ও সামাজিক ভাস্কর্য।
দুটি মন্দিরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ, যা নিত্যপূজিত হয়। মন্দিরে কোনো প্রতিষ্ঠা ফলক নেই, যা আমাকে বেশ অবাক করলো। হতে পারে কোনো এক সময় সংস্কারের নামে ফলকটি তুলে ফেলা হয়েছে। তাও পালচৌধুরী বাড়ির ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই মন্দিরদুটো প্রতিষ্ঠা হয় ১৮০২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণপান্তির ছোট ভাই শম্ভুচন্দ্র।
পালচৌধুরীদের কীর্তি ছড়িয়ে আছে প্রায় গোটা রানাঘাট জুড়েই। তার মধ্যে কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে, আর বাকি পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এইবারের পরিদর্শনে আমি কোনো মন্দির খোলা পাই নি, তাই ইচ্ছা রইলো পরেরবার বাকি জায়গাগুলো দর্শন করার।
তথ্যসূত্র: নদীয়া জেলার পুরাকীর্তি - তথ্য সংকলন ও গ্রন্থনা মোহিত রায়।
Comments
Post a Comment