ময়মনসিংহ মেমোরিয়াল, কোলকাতা (Maimensing Memorial, Kolkata)

কেওড়াতলা শ্মশানের পাশে ঠিক মহীশূর উদ্যানের পাশে একটা বেশ বড়ো আকৃতির নবরত্ন মন্দির দেখা যায়। মন্দিরটির উচ্চতার জন্য সেটি বেশ দূর থেকেও চোখে পরে। মন্দিরের ওপরে সামনের দেওয়ালে লেখা আছে -

"MAIMENSING MEMORIAL"
"জেলা ময়মনসিং আঠারবাড়ী নিবাসী
মহিমাচন্দ্র রায় চৌধুরীর শ্মশান মন্দির"


স্থানীয় লোকজন এখন এটা একটা কালিমন্দির হিসেবে জানলেও, এটা আদপে একটা শিব মন্দির। এটা একটা শ্মশান-মন্দির, আর রায় চৌধুরী বংশের ব্যক্তিগত শ্মশানভূমি। জায়গাটার বর্ণনা দেবার আগে এনাদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। পূর্ব-পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আছে আঠারোবাড়ী বলে একটা অঞ্চল। সেখানের জমিদার ছিলেন এই রায় চৌধুরীরা। মহিমচন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন এখানকার জমিদার। তার স্ত্রীর নাম জ্ঞানদা সুন্দরী। এনাদের দুটি কন্যা-সন্তান, স্বর্ণলতা ও হেমলতা। কোনো পুত্রসন্তানের জন্ম না হবার কারণে, মহিমচন্দ্র একটি পুত্রসন্তান দত্তক নেবার জন্য মনস্থির করেন। সেই মতো, তিনি এবং জ্ঞানদাদেবী ১২৯০ বঙ্গাব্দের ২৪শে মাঘ তারিখে দত্তক নেন প্রমোদচন্দ্রকে। কিছুদিন পরে মহিমচন্দ্রর মৃত্যু হয়, এবং জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন প্রমোদচন্দ্র ও জ্ঞানদাদেবী। প্রমোদচন্দ্রর আমন্ত্রণে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন আঠারোবাড়ির জমিদার বাড়িতে, ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে।


এবার আসা যাক মহিমের কথায়। মৃত্যুর পূর্বে মহিমচন্দ্র তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও পালিতপুত্র প্রমোদের সাথে কোলকাতায় চলে আসেন, ভবানীপুর অঞ্চলের রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের একটা বাড়িতে। কোলকাতাতেই তার মৃত্যু হয়, এবং আজকে যেখানে মন্দিরটি আছে, সেখানেই তাকে দাহ করা হয়েছিল। এই জায়গাটির ওপরে বর্তমানের নবরত্ন মন্দিরটি স্থাপন করা হয়। মন্দিরের উদ্বোধন করে, সেখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেন জ্ঞানানন্দ ও বালানন্দ ব্রহ্মচারী। তারিখটা আমি খুঁজে পাই নি।


এবার আসি মন্দিরের বর্ণনায়। নবরত্ন মন্দিরটির চূড়ার উচ্চতা মাটি থেকে প্রায় ৬০ ফুট উঁচুতে। মূল বিগ্রহ একটি শিবলিঙ্গ হলেও, বর্তমানে কালী, লোকনাথ ইত্যাদি আরো দেব-দেবীর সমাহার ঘটেছে। 

মন্দিরের চাতালের বামদিকে তিনটি সমাধিবেদি আছে, একটি জ্ঞানদাসুন্দরী, একটি প্রমোদচন্দ্র ও অন্তিমটি এদের বংশের কারোর। মন্দিরের সিঁড়িতে উঠতেই বামদিকে মাটিতে গর্ত করে কাঠে মৃতদেহ পোড়ানোর ব্যবস্থা আছে।


এখানে আরেকটা জিনিস যা আমার চোখে পরলো, সেটা হলো শ্বেতপাথরের একটি নন্দীর মূর্তি, যা নীচে তুলসীমঞ্চের পাশে আছে। এই নন্দীর মাথায় ঝুঁটি, এবং সামনের একটি পা ভাঁজ করা। খোঁজ করে জানলাম, এটি বেনারস থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

টালিগঞ্জ ও কালীঘাট অঞ্চলে, মন্ডলদের কৃষ্ণমন্দিরগুলো বাদে এরকম সুন্দর বড়ো নবরত্ন মন্দির বিশেষ দেখা যায় না। দক্ষিণ কোলকাতার বুকে এক টুকরো ময়মনসিংহর স্মৃতি হিসেবে এই মন্দিরটি এখনো টিঁকে আছে।

তথ্যসূত্র:
১. indiankanoon.org/doc/1453438/
২. www.thedailystar.net/arts-entertainment/atharabari-zamindar-palace-tagores-memory-shambles-1285168?amp
৩. www.thedailystar.net/arts-entertainment/tagore-mymensingh-1402624?amp

Comments

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)