আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। কলকাতা তখনো আজকের কোলকাতা হয় নি। হুগলীনদীর গতিপথও ছিল অন্য। আজকে জোড়াবাগান চারমাথার ক্রসিংয়ের (Jorabagan Four Point Crossing) থেকে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের (Nimtala Ghat Street) দিকে এলে যে অষ্টাদশ শতাব্দীর আনন্দময়ী কালীমন্দির (Anandamayi Kali Temple) আছে, তার কাছেই বয়ে যেত গঙ্গা। মন্দিরসংলগ্ন অঞ্চলেই গঙ্গার উপরে ছিল সেখানকার ধর্মপ্রাণ জমিদার মহম্মদ রমজান আলীর (Muhammad Ramzan Ali) এক পূর্বপুরুষ নিয়ামাতুল্লার (Niyamathullah) তৈরি ঘাট, যা তখনকার হিন্দু ও মুসলমানরা দুজনেই ব্যবহার করতো। এদের পরিবার এই অঞ্চলে এসেছিলেন বহু আগে, তাদের অনেক পরে হাটখোলার দত্তরা এই অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন। সেদিনটার সকালটা ছিল অন্যদিনের মতোই। তর্করত্নমহাশয় তার দুই ছাত্রের সাথে গঙ্গাস্নান সেরে, গঙ্গার ঘাটে আহ্নিকে বসেছেন। লোকজন স্নান সেরে ফিরে যাচ্ছে। এমন সময় রমজান আলীর বাড়ির কিছু বাচ্চা ছেলে এলো চান করতে, সাথে বাড়ীর পুরোনো ভৃত্য ফজলু। কিছুক্ষণ নদীতে হুটোপাটি করার পর ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে জল ছোঁড়াছুড়ি করতে লাগলো। কিন্তু অসাবধানতা-বশতঃ, সেই জলের ছিটে গিয়ে লাগলো আহ্নিকে মগ্ন তর্করত্নমহাশয়দের...
বউবাজার অঞ্চলটা আমার বেশ প্রিয়, কারণ চিৎপুরের রাস্তার পরেই, এর গায়েও একটা কসমোপলিটন গন্ধ আছে। ইংরেজ আমল থেকেই এই রাস্তার আশে-পাশে বাঙালিদের সাথেই গড়ে উঠেছে আংলো ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ও পার্সিদের বসতি। অনেকেই জানেন না, এখানে রয়েছে পার্সিদের একটি ধর্মশালা ও একটি অগ্নিমন্দির, যদিও দুটি একটু দূরত্বে অবস্থান করে। আজ আমি এই অগ্নিমন্দিরের কথা বলবো। তবে, তার আগে কোলকাতাতে কিভাবে পার্সিরা এলো, আর এই পার্সিদের ধর্মই বা কি... সেটা আগে সংক্ষেপে বলে নেওয়া দরকার। সবার আগে বলি, পার্সিদের নাম হয়েছিল তাদের আদি বাসস্থান দক্ষিণ ইরানের পার্স (বা ফার্স) প্রদেশ থেকে। জন্মভূমিতে ধর্মাচরণের বিরোধিতা, এবং আরবদের ক্রমাগত আক্রমণের কারণে তাদের মধ্যে একদল একদিন বেরিয়ে পড়ে নিজের দেশ ছেড়ে, ভারতের গুজরাটে এসে পৌঁছায় সপ্তম শতকের মাঝে। তৎকালীন গুজরাটের হিন্দুরা তাদের মেনে নেয়, এবং পার্সিরা এখানে থাকতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে পার্সিরা ভারতের মূলস্রোতে মিশে যেতে থাকে, এবং ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অংশে। কোলকাতাতে প্রথম পার্সি হিসেবে নাম পাওয়া যায় দাদাবয় বেরামজী বানাজীর (Dadaboi Beramjee Banajee)। ১৭৬৭ সাল নাগাদ...
ভূত মানে তো অতীত! এই অতীতের স্মৃতি কখনো আমাদের সুখ দেয়, কখনো কষ্টও দেয়। আবার সে কখনো ভয়াল স্মৃতিকে টেনে নিয়ে আসে বর্তমানে... যা শুনলে আমাদের গা ছম-ছম করে ওঠে! রাজশেখর বসু তো এই প্রসঙ্গে বলেই গেছেন - "এই কলকাতা শহরে রাস্তায় যারা চলাফেরা করে- কেউ কেরানি, কেউ দোকানি, কেউ মজুর, আর কেউবা অন্য কিছু। তা মোটেই নয়। তাদের মধ্যে সর্বদাই দু-চারটে ভূত পাওয়া যায়। তবে চিনতে পারা দুষ্কর।" যেকোনো পুরোনো জিনিসের সাথেই মিশে থাকে কিছু গল্প। আমাদের কল্লোলিনী কোলকাতা অনেক আধুনিক হয়ে উঠলেও, তা বহন করে চলেছে অনেক পুরোনো স্মৃতি। আর সেই স্মৃতির অতলেই রয়েছে কোলকাতার কিছু পুরোনো ভুতুড়ে জায়গার গল্প। কোলকাতার ভুতুড়ে জায়গার গল্প বলতে হলে শুরু করা উচিত একদম খাস ভুতেদের ডেরা থেকে, যা হলো কবরস্থান! কোলকাতায় কবরস্থানের অভাব নেই! এর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-গ্রিক-ইহুদি-আর্মেনিয়ান-চিনে সবই আছে। আমি শুরু করবো সাউথ পার্ক সেমেটারি থেকে। এই কবরখানাটি আছে পার্কস্ট্রিটের শেষপ্রান্তে, মল্লিকবাজার ক্রসিংয়ের কাছে। ইংরেজি ১৭৬৭ সালের এটি খোলা হয়, এবং কবর দেওয়া হয় ১৭৯০ সাল পর্যন্ত। শহরের একটা প্রাচীন চার্চহীন কবরখা...
Comments
Post a Comment