বউবাজারের গোবিন্দ সেন লেন, কলকাতার বুকে এক প্রাচীন রথের সাক্ষী। এখানে চুনিমণি দাসী প্রতিষ্ঠিত ১২৫ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি রথ, যা শুধু কাঠের কাঠামো নয়, বরং ধর্মীয় ভক্তি, শিল্পকলা এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই রথযাত্রা, যা একসময় রাজপথ দিয়ে যেত, এখন বাড়ির উঠোনে সীমাবদ্ধ হলেও, এর জৌলুস ও ভক্তি এতটুকুও কমেনি। চুনী মণি দাসীর রথটি পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট এবং ত্রিতল। এর নির্মাণশৈলীতে সাবেক শিল্পরীতির সুস্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। রথের চার কোণে চারটি পুতুল সজ্জিত এবং রথের গায়ে আঁকা আছে দেবদেবীর মন মুগ্ধ করা ছবি। এই কারুকার্যময় রথটি শুধু একটি বাহন নয়, এটি এক চলমান শিল্পকর্ম, যা সেই সময়ের শিল্পীদের দক্ষতা ও নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। এই রথের মূল আকর্ষণ হলেন ভগবান জগন্নাথ। কথিত আছে, পুরীর নব কলেবরের সময় অতিরিক্ত নিম কাঠ দিয়ে যে জগন্নাথ বিগ্রহ তৈরি হয়েছিল, সেই নিমকাঠের একটি অংশ দিয়েই চুনী মণি দাসীর রথের জগন্নাথ বিগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই বিগ্রহের মধ্যে একটি শালগ্রাম শিলাও প্রতিষ্ঠিত আছে, যা এর পবিত্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই বিশেষত্বই এই পরিবারের জগন্নাথকে এক অনন...
বউবাজার অঞ্চলটা আমার বেশ প্রিয়, কারণ চিৎপুরের রাস্তার পরেই, এর গায়েও একটা কসমোপলিটন গন্ধ আছে। ইংরেজ আমল থেকেই এই রাস্তার আশে-পাশে বাঙালিদের সাথেই গড়ে উঠেছে আংলো ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ও পার্সিদের বসতি। অনেকেই জানেন না, এখানে রয়েছে পার্সিদের একটি ধর্মশালা ও একটি অগ্নিমন্দির, যদিও দুটি একটু দূরত্বে অবস্থান করে। আজ আমি এই অগ্নিমন্দিরের কথা বলবো। তবে, তার আগে কোলকাতাতে কিভাবে পার্সিরা এলো, আর এই পার্সিদের ধর্মই বা কি... সেটা আগে সংক্ষেপে বলে নেওয়া দরকার। সবার আগে বলি, পার্সিদের নাম হয়েছিল তাদের আদি বাসস্থান দক্ষিণ ইরানের পার্স (বা ফার্স) প্রদেশ থেকে। জন্মভূমিতে ধর্মাচরণের বিরোধিতা, এবং আরবদের ক্রমাগত আক্রমণের কারণে তাদের মধ্যে একদল একদিন বেরিয়ে পড়ে নিজের দেশ ছেড়ে, ভারতের গুজরাটে এসে পৌঁছায় সপ্তম শতকের মাঝে। তৎকালীন গুজরাটের হিন্দুরা তাদের মেনে নেয়, এবং পার্সিরা এখানে থাকতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে পার্সিরা ভারতের মূলস্রোতে মিশে যেতে থাকে, এবং ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অংশে। কোলকাতাতে প্রথম পার্সি হিসেবে নাম পাওয়া যায় দাদাবয় বেরামজী বানাজীর (Dadaboi Beramjee Banajee)। ১৭৬৭ সাল নাগাদ...
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মধ্যে দিয়ে যে শিয়ালদা-লক্ষীকান্তপুর ট্রেনটি চলে, সেটি দাঁড়ায় 'বহরু' নামের এক স্বল্পখ্যাত স্টেশনে। আজকাল জয়নগরের সাথে মোয়ার লড়াইতে লোকজন বহরুর নাম জানতে শুরু করেছে। অনেকেই কিন্তু জানে না, এই বহরুতেই এমন একটি জিনিস আছে, যা এই জেলাতে এক ও অদ্বিতীয়। আদিগঙ্গার পশ্চিম-পাড়ে এই অঞ্চলের উল্লেখ পাওয়া যায় ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে, কৃষ্ণরাম দাস রচিত রায়মঙ্গলে। তখন এই অঞ্চলের পরিচিতি ছিল 'বড়ুক্ষেত্র' নামে। - "সঘনে দামামা ধ্বনি শুনি রায় গুণমনি বড়ুক্ষেত্র বহিল আনন্দে"। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের জমিদার হন বসুরা, আর তারাই বহরু বাজারের কাছে স্থাপন করেন পাঁচটি আটচালা শিবমন্দির (প্রতিষ্ঠার সময় সম্ভবতঃ ১২৪৬ বঙ্গাব্দে)। ২০০৫ সালে এই মন্দিরগুলোর আমূল সংস্কার হবার পরে, এর প্রাচীনত্ব লোপ পেয়েছে। মন্দিরগুলো থেকে অদূরেই রয়েছে মাঠের মধ্যে একটি চারচালা দোলমঞ্চ, যার উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। এখানে রয়েছে ফ্যানলাইটের কাজ এবং তার সাথে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত সরু আয়নিক স্তম্ভের ব্যবহার। পুরো মঞ্চটি চুনকাম করে ১২টা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে...
Comments
Post a Comment