এখন ইসলামে রমজান মাস চলছে, সামনেই ঈদ। প্রথমেই একটা কথা বলে নি, এই শব্দটাকে আমরা দুভাবে দেখি... রমজান (Ramzan) যা একটি পার্শিয়ান শব্দ, এবং রমদান (Ramadan) যা একটি আরবিক শব্দ। দুটোই সঠিক, এবং দুটোই ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি অবশ্য ছোটবেলা থেকেই রমজান শুনে আসছি, তাই সেটাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কোলকাতায় যে রমজান পালন হয়, তার সাধারণতঃ তিনটে দিক আপনারা দেখতে পাবেন। প্রথমতঃ, ঈশ্বরের প্রতি অপার ভক্তি। দ্বিতীয়তঃ, রাজনীতির বিভিন্ন কায়দাকৌশল। তৃতীয়তঃ, বিভিন্ন ধরণের মোগলাই বা পার্শিয়ান খাদ্য ও পানীয়ের সম্ভার! আমি এই তৃতীয় দিকটা নিয়েই আলোচনা করবো। এই সময়টা কোলকাতার প্রধান মুসলিম এলাকাগুলোতে, অর্থাৎ মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুর, পার্কসার্কাস, জাকারিয়া স্ট্রীট... এসব এলাকায় সন্ধ্যার পরে পাওয়া যায় প্রচুর ইফতারের খাবার। (সূর্যাস্তের পরে উপবাসভঙ্গ করার জন্য যে মিল খাওয়া হয়, তাকেই ইফতার বলে)। বিগত কয়েকবছর ধরে, আমাদের এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে ইফতারের খাবারের স্বর্গ হিসেবে উঠে এসেছে জাকারিয়া স্ট্রিটের নাম। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমার মনে হয়েছে, কসমোপলিটন অঞ্চল হিসেবে শহরের মাঝে অবস্থান ও যাতায়াতের সুবিধা। ...
রাস্তার ধারে আমরা কতো রকমের জিনিষ দেখি, কিন্তু সেটার প্রতি আমাদের চোখ যায় না। টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটা বাসস্টপ আছে, যার নাম ঘড়িঘর (Ghari Ghar, Tollygaunge)। একটা গলির রাস্তা, আর তার ঢোকার মুখে একটা মাঝারি সাইজের পুরোনো গেট। সাদা রঙের গেটের ওপরে পড়েছে বহু যুগের ধুলো-ময়লার আবরণ, তাই এখন আর তাকে শ্বেত-শুভ্র মনে হয় না। অঞ্চলটা সাধারণ মানুষের কাছে বিখ্যাত একটা মোটর ড্রাইভিং স্কুলের জন্য। কিন্তু কেনই বা এই গেট, আর কেনই বা এই অঞ্চলের নাম ঘড়িঘর? এর উত্তর লুকিয়ে আছে গেটের নিচ দিয়ে চলে যাওয়া সেই গলিরাস্তার মধ্যে, যার নাম প্রিন্স রহিমুদ্দীন লেন (Prince Rahimuddin Lane)। ওয়াদিয়ার রাজবংশের রাজত্বকালে, ১৭৫০-এর দিকে সুলতান হায়দার আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র, সৈয়দ ওয়াল শরীফ সুলতান ফতেহ আলী সাহাব টিপু (Tipu Sultan) মহীশূরের নবাব হন (১০ নভেম্বর ১৭৫০ থেকে ৪ মে ১৭৯৯)। প্রবল ইংরেজবিদ্বেষী এই সুলতান ছিলেন, একজন বড় মাপের পণ্ডিত ও কবি। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর বা শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে পরাজিত হন মহীশূরের শাসক টিপু সুলতান, তাঁকে হত্যা করে ব্রিটিশরা। ...
আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। কলকাতা তখনো আজকের কোলকাতা হয় নি। হুগলীনদীর গতিপথও ছিল অন্য। আজকে জোড়াবাগান চারমাথার ক্রসিংয়ের (Jorabagan Four Point Crossing) থেকে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের (Nimtala Ghat Street) দিকে এলে যে অষ্টাদশ শতাব্দীর আনন্দময়ী কালীমন্দির (Anandamayi Kali Temple) আছে, তার কাছেই বয়ে যেত গঙ্গা। মন্দিরসংলগ্ন অঞ্চলেই গঙ্গার উপরে ছিল সেখানকার ধর্মপ্রাণ জমিদার মহম্মদ রমজান আলীর (Muhammad Ramzan Ali) এক পূর্বপুরুষ নিয়ামাতুল্লার (Niyamathullah) তৈরি ঘাট, যা তখনকার হিন্দু ও মুসলমানরা দুজনেই ব্যবহার করতো। এদের পরিবার এই অঞ্চলে এসেছিলেন বহু আগে, তাদের অনেক পরে হাটখোলার দত্তরা এই অঞ্চলে থাকতে শুরু করেন। সেদিনটার সকালটা ছিল অন্যদিনের মতোই। তর্করত্নমহাশয় তার দুই ছাত্রের সাথে গঙ্গাস্নান সেরে, গঙ্গার ঘাটে আহ্নিকে বসেছেন। লোকজন স্নান সেরে ফিরে যাচ্ছে। এমন সময় রমজান আলীর বাড়ির কিছু বাচ্চা ছেলে এলো চান করতে, সাথে বাড়ীর পুরোনো ভৃত্য ফজলু। কিছুক্ষণ নদীতে হুটোপাটি করার পর ছেলেগুলো নিজেদের মধ্যে জল ছোঁড়াছুড়ি করতে লাগলো। কিন্তু অসাবধানতা-বশতঃ, সেই জলের ছিটে গিয়ে লাগলো আহ্নিকে মগ্ন তর্করত্নমহাশয়দের...
Comments
Post a Comment