বউবাজার অঞ্চলটা আমার বেশ প্রিয়, কারণ চিৎপুরের রাস্তার পরেই, এর গায়েও একটা কসমোপলিটন গন্ধ আছে। ইংরেজ আমল থেকেই এই রাস্তার আশে-পাশে বাঙালিদের সাথেই গড়ে উঠেছে আংলো ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ও পার্সিদের বসতি। অনেকেই জানেন না, এখানে রয়েছে পার্সিদের একটি ধর্মশালা ও একটি অগ্নিমন্দির, যদিও দুটি একটু দূরত্বে অবস্থান করে। আজ আমি এই অগ্নিমন্দিরের কথা বলবো। তবে, তার আগে কোলকাতাতে কিভাবে পার্সিরা এলো, আর এই পার্সিদের ধর্মই বা কি... সেটা আগে সংক্ষেপে বলে নেওয়া দরকার। সবার আগে বলি, পার্সিদের নাম হয়েছিল তাদের আদি বাসস্থান দক্ষিণ ইরানের পার্স (বা ফার্স) প্রদেশ থেকে। জন্মভূমিতে ধর্মাচরণের বিরোধিতা, এবং আরবদের ক্রমাগত আক্রমণের কারণে তাদের মধ্যে একদল একদিন বেরিয়ে পড়ে নিজের দেশ ছেড়ে, ভারতের গুজরাটে এসে পৌঁছায় সপ্তম শতকের মাঝে। তৎকালীন গুজরাটের হিন্দুরা তাদের মেনে নেয়, এবং পার্সিরা এখানে থাকতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে পার্সিরা ভারতের মূলস্রোতে মিশে যেতে থাকে, এবং ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অংশে। কোলকাতাতে প্রথম পার্সি হিসেবে নাম পাওয়া যায় দাদাবয় বেরামজী বানাজীর (Dadaboi Beramjee Banajee)। ১৭৬৭ সাল নাগাদ...
ভূত মানে তো অতীত! এই অতীতের স্মৃতি কখনো আমাদের সুখ দেয়, কখনো কষ্টও দেয়। আবার সে কখনো ভয়াল স্মৃতিকে টেনে নিয়ে আসে বর্তমানে... যা শুনলে আমাদের গা ছম-ছম করে ওঠে! রাজশেখর বসু তো এই প্রসঙ্গে বলেই গেছেন - "এই কলকাতা শহরে রাস্তায় যারা চলাফেরা করে- কেউ কেরানি, কেউ দোকানি, কেউ মজুর, আর কেউবা অন্য কিছু। তা মোটেই নয়। তাদের মধ্যে সর্বদাই দু-চারটে ভূত পাওয়া যায়। তবে চিনতে পারা দুষ্কর।" যেকোনো পুরোনো জিনিসের সাথেই মিশে থাকে কিছু গল্প। আমাদের কল্লোলিনী কোলকাতা অনেক আধুনিক হয়ে উঠলেও, তা বহন করে চলেছে অনেক পুরোনো স্মৃতি। আর সেই স্মৃতির অতলেই রয়েছে কোলকাতার কিছু পুরোনো ভুতুড়ে জায়গার গল্প। কোলকাতার ভুতুড়ে জায়গার গল্প বলতে হলে শুরু করা উচিত একদম খাস ভুতেদের ডেরা থেকে, যা হলো কবরস্থান! কোলকাতায় কবরস্থানের অভাব নেই! এর মধ্যে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-গ্রিক-ইহুদি-আর্মেনিয়ান-চিনে সবই আছে। আমি শুরু করবো সাউথ পার্ক সেমেটারি থেকে। এই কবরখানাটি আছে পার্কস্ট্রিটের শেষপ্রান্তে, মল্লিকবাজার ক্রসিংয়ের কাছে। ইংরেজি ১৭৬৭ সালের এটি খোলা হয়, এবং কবর দেওয়া হয় ১৭৯০ সাল পর্যন্ত। শহরের একটা প্রাচীন চার্চহীন কবরখা...
বউবাজারের গোবিন্দ সেন লেন, কলকাতার বুকে এক প্রাচীন রথের সাক্ষী। এখানে চুনিমণি দাসী প্রতিষ্ঠিত ১২৫ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি রথ, যা শুধু কাঠের কাঠামো নয়, বরং ধর্মীয় ভক্তি, শিল্পকলা এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত উদাহরণ। এই রথযাত্রা, যা একসময় রাজপথ দিয়ে যেত, এখন বাড়ির উঠোনে সীমাবদ্ধ হলেও, এর জৌলুস ও ভক্তি এতটুকুও কমেনি। চুনী মণি দাসীর রথটি পাঁচ চূড়াবিশিষ্ট এবং ত্রিতল। এর নির্মাণশৈলীতে সাবেক শিল্পরীতির সুস্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। রথের চার কোণে চারটি পুতুল সজ্জিত এবং রথের গায়ে আঁকা আছে দেবদেবীর মন মুগ্ধ করা ছবি। এই কারুকার্যময় রথটি শুধু একটি বাহন নয়, এটি এক চলমান শিল্পকর্ম, যা সেই সময়ের শিল্পীদের দক্ষতা ও নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। এই রথের মূল আকর্ষণ হলেন ভগবান জগন্নাথ। কথিত আছে, পুরীর নব কলেবরের সময় অতিরিক্ত নিম কাঠ দিয়ে যে জগন্নাথ বিগ্রহ তৈরি হয়েছিল, সেই নিমকাঠের একটি অংশ দিয়েই চুনী মণি দাসীর রথের জগন্নাথ বিগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই বিগ্রহের মধ্যে একটি শালগ্রাম শিলাও প্রতিষ্ঠিত আছে, যা এর পবিত্রতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই বিশেষত্বই এই পরিবারের জগন্নাথকে এক অনন...
Comments
Post a Comment