ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকা ও আর্য কুটির (Indian Mirror Tabloid and Aryan Cottage)

ধর্মতলার লাগোয়া তালতলা অঞ্চলে, একটা রাস্তার নাম ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রীট। লেনিন সরণি দিয়ে এই রাস্তায় ঢুকলেই চোখে পরে একটা সিংহদুয়ার, কোলকাতা মিউনিসিপালিটি যাকে গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ স্ট্রাকচার হিসেবে ঘোষণা করেছে।


বর্তমানে শুধু এই সিংহদুয়ারটাই রয়েছে, ভিতরের আসল বাড়িটা আর নেই। বাড়িটার নাম ছিল আর্য কুটির (Aryan Cottage), এবং এর ঠিকানা 52A এবং 52B ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। প্রবেশদ্বারের একটা মার্বেল ফলক থেকে জানা যায়, 'আর্য কুটির'-এ থাকতেন ইন্ডিয়ান মিররের বিখ্যাত সম্পাদক নরেন্দ্র নাথ সেন।


এবার আসা যাক 'ইন্ডিয়ান মিরর' সম্পর্কে। বিখ্যাত ব্রাহ্ম নেতা কেশব চন্দ্র সেন এবং তার বন্ধু মনোমোহন ঘোষ (একজন বিখ্যাত ব্যারিস্টার), ১৮৬১ সালে একটি পাক্ষিক হিসাবে ইন্ডিয়ান মিরর শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে ১৮৭০ সাল থেকে দৈনিক হয়ে ওঠে। শুরু থেকেই এই দৈনিকে নরেন্দ্রনাথ সেনের (১৮৪৩-১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) নিয়মিত অবদান ছিল। পরবর্তীকালে, কেশব সেনের অনুরোধে প্রতাপ মজুমদার (একজন ব্রাহ্ম নেতা) ১৮৬৭ সালে পত্রিকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন, এবং ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর নরেন্দ্র সেন ফিরে আসেন এবং এর একমাত্র মালিক এবং সম্পাদক হন। তিনি একটি বিশেষ রবিবার সাপ্তাহিক বিভাগ চালু করেছিলেন, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন বাবু কৃষ্ণ বেহারী সেন।


নরেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বিখ্যাত নেতা হরি মোহন সেনের চতুর্থ পুত্র। খুব কম বয়সেই তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেন। ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন একজন উদার হিন্দু। কিন্তু অন্যান্য ধর্ম, বিশেষ করে বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি থিওসফিক্যাল সোসাইটি অব বেঙ্গল এবং মোহবোধি সোসাইটির একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।


তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে, তার বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। জায়গাটি কেনে বঙ্গীয় সাহা সমিতি, এবং একটি ছাত্র ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়াও এখানে রয়েছে 'বঙ্গীয় শুড়ি সমাজে'র কার্যালয়। 


বর্তমান বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে 'বাঘওলা বাড়ি' নামে পরিচিত, এর কারণ পুরনো গেটের চূড়ায় রয়েছে একটি রাজকীয় সিংহের মূর্তি।


তথ্যসূত্র:
১. theosophy.wiki/en/Noren%E1%B8%8Dran%C4%81%E1%B9%ADh_Sen
২. getbengal.com/details/the-mecca-of-journalism-lies-in-neglect
৩. peoplepill.com/people/behari-lal-gupta

Comments

  1. Good post, various print media vs Bengal Social reconsteuction intrigues me having lived in 64 destinations across Bharat perspective at large visiting Ettiahpuram, Subramanya Bharati's village near Tuticorin

    ReplyDelete
  2. কত দামী খবর আমরা দেখেও দেখিনা, এভাবে আমাদের চোখ খুলে যায় ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)

কোলকাতার পার্সি অগ্নি-মন্দিরগুলোর গল্প (The Parsi Fire Temples of Kolkata)

নতুন কোলকাতার পুরোনো ভুতেদের গল্প (Story of the Old Ghosts of New Calcutta)