Posts

Showing posts from June, 2021

সাউথ পার্ক স্ট্রিট সেমেটারী : এখানে ঘুমিয়ে আছে ইতিহাস (South Park Cemetery)

Image
উনবিংশ শতকের, ইউরোপ আর আমেরিকার বাইরের সবথেকে বড় ক্রিস্টিয়ানদের কবরখানা হলো সাউথ পার্ক স্ট্রিট সেমেটারী। এটা পুরোনো বিনা চার্চের কবরখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৭৬৭ সাল থেকে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত এটা ব্যাবহার হয়েছিল। বর্তমানে এটা একটা হেরিটেজ সাইট। এই কবরখানার জন্যই পার্ক স্ট্রিটের নাম আগে ছিল বারিয়াল গ্রাউন্ড স্ট্রিট। পার্ক স্ট্রিট, আর মল্লিকবাজারের সংযোগস্থলে রয়েছে এই কবরখানা। এটি ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবার পরে, কাছেই আর একটি কবরখানা খোলা হয়, লোয়ার পার্ক স্ট্রিট সেমেটারী, সম্ভবতঃ ১৮৪০ সালে।  ভিতরে ঢুকলে, একটা অদ্ভুত গা ছম ছমে ভাব আসে। বাইরের এত কোলাহল, ভিতরে এসে পৌঁছায় না। বহু বিখ্যাত লোকের সমাধি আছে যেখানে, তাদের মধ্যে অন্যতম ডিরোজিও এবং হিন্দু স্টুয়ার্ট। হিন্দু স্টুয়ার্টের কবরটি মন্দিরের আদলে গড়া। কবরের উপরের স্মৃতিসৌধগুলো গথিক, এবং ইন্দো-ইউরোপিয়ান ধাঁচে গড়া। সৌধগুলো দেখে, আর স্মৃতিফলকের লেখাগুলো দেখে, পুরোনো সময়ে হারিয়ে যাওয়া যায়। সেই সময়ের কতো দোদন্ডপ্রতাপি লোকজন, চিরঘুমে ঘুমিয়ে রয়েছে এখানে। কর্তৃপক্ষ জায়গাটি মোটামুটি পরিষ্কার রেখেছে।

ব্রাহ্মসমাজের উত্থান ও সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ (The Rise of the Brahmo and Sadharan Brahmo Samaj)

Image
২১১ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রীট (বিধান সরণি) ঠিকানায় একটা বিরাট বাড়ি দেখা যায়, যার নাম 'সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ'। বাড়িটি আদতে একটি ব্রাহ্ম মন্দির। এই বাড়িটি আমরা অনেকেই দেখেছি, কিন্তু খুব ভালো করে ব্রাহ্মদের সম্পর্কে আমরা জানি না। তাই এই বাড়ি নিয়ে বলার আগে, কিছুটা জেনে নেওয়া যাক ব্রাহ্মদের বিষয়ে। হিন্দুর মন্দিরে দেব-দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত থাকলেও বৈদিক যুগে ঈশ্বর ছিলেন ভাবময়। উপনিষদের যুগে তা আরও স্পষ্ট হল যখন ঋষি বললেন : "একমেবাদ্বিতীয়ম ব্রহ্ম", অর্থাৎ ব্রহ্ম এক ও অদ্বিতীয়। চোখ যাকে দেখতে পায় না, অথচ যার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে চোখ দেখার মতাে বস্তুকে দেখতে পায় সেই শক্তিই (তিনিই) ব্রহ্ম।  সাধারণ চোখ দিয়ে যাকে দেখে ব্রহ্ম বলে উপাসনা করছ, তিনি ব্রহ্ম নন। ক্রমে হিন্দুধর্মে পৌত্তলিকতা জায়গা করে নিল, এবং তা হয়ে উঠল নানা আচার-বিচার সর্বস্ব ক্রিয়াকর্মবহুল মানবতার ভাববিযুক্ত শুষ্ক অনুষ্ঠান মাত্র। আসল ঈশ্বরতত্ত্বই লােপ পেয়ে গেল এসব শুষ্কতার মাঝে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ার ফলে মধ্যযুগে যে ভক্তি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার মূল সুর ছিল নিরাকার একেশ্বরবাদ ও মানবতাবা

শোভারাম বসাকের জগন্নাথ মন্দির ও ঘাট (Jagannath Temple and Bathing Ghat of Sovaram Basak)

Image
কোলকাতার স্ট্রান্ড রােডের পুরানাে মিন্টের লাগােয়া একটা গলি রাস্তা দেখা যায়, যার নাম 'নবাব লেন'। ছোট এই লেনটি গিয়ে শেষ হিয়ে মহর্ষি দেবেন্দ্র রােডে। নবাব লেন ও মহর্ষি দেবেন্দ্র রােডের ঠিক সংযােগস্থলে (১নং নবাব লেন) রয়েছে একটি জগন্নাথ মন্দির, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শোভারাম বসাক। মন্দির যে কবে তৈরী হয়েছে, সেটা নিয়ে কয়েকটা অভিমত চালু আছে। কোলকাতার বসাক বংশের শােভারাম বসাক ছিলেন সপ্তগ্রামের হলদিপুরের বাসিন্দা। সেখান থেকে ব্যবসাসূত্রে এসে তিনি গােবিন্দপুরে এসে থাকতে শুরু করেন, এবং বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সুতাে ও কাপড়ের ব্যবসা করে বিত্তশালী হয়ে ওঠেন। সেই সময়েই শােভারাম এই জগন্নাথ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেন নিজের বাড়িতে। পরবর্তীকালে, ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গ নির্মাণের সময়ে শােভারামকে গােবিন্দপুর থেকে উঠে এসে বড়বাজারে বাড়ি করতে হয়, এবং সেখানেই নিজস্ব বাড়ির পশ্চিমদিকে, গঙ্গার তীরে এক মন্দির নির্মাণ করে জগন্নাথদেবকে প্রতিষ্ঠা করেন (এখানে মনে রাখতে হবে, তখন কিন্তু গঙ্গা প্রায় স্ট্রান্ড রোডের ওপরেই বইতো)। এছাড়া মন্দিরের পাশে স্নানার্থীদের জন্য যে ঘাটটি তিনি নির্মাণ করে

কোলকাতার সবথেকে বড়ো মসজিদ - নাখোদা (The Largest Mosque of Kolkata - Nakhoda Masjid)

Image
কোলকাতায় তো প্রাচীন মসজিদের অভাব নেই। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কোলকাতার বৃহত্তম মসজিদ কোনটা... তবে এক কথায় এর উত্তর হবে নাখোদা মসজিদ। ১নম্বর জাকারিয়া স্ট্রিটের এই বিরাট মসজিদের কথা আমি কিছুটা লিখেছিলাম, জাকারিয়া স্ট্রিটে রমজানের খাবারের ইতিহাস লেখার সময় (লেখাটা পড়ুন এই লিঙ্কে https://bit.ly/2IEvbBc) । এবার এই মসজিদের ইতিহাস নিয়ে একটু জানা যাক। আজ যেখানে এই মসজিদ, সেখানে কিন্তু আগেও একটা মসজিদ ছিল, কিন্তু সেটা ছিল অনেকটাই ছোট। আগের সেই মসজিদের জায়গায় এই বিশালাকার মসজিদটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর। কাজ শেষ হতে বেশ সময় লাগে, এবং সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে। কচ্ছি মেমন জামাত সম্প্রদায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটিতে, এক বিখ্যাত ধনবান ব্যবসায়ী হাজি নুর মহম্মদ জাকারিয়া (এনার নামেই জাকারিয়া স্ট্রীট), মতােয়ালী পদে নিযুক্ত হয়ে মসজিদটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে ব্রতী হন। এই মসজিদের সঙ্গে একটি মাদ্রাসাও প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশালাকার এই মসজিদটির স্থাপত্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল আকবরের সমাধিসৌধ স

সি.এন.আই. ওয়েসলেয়ান চার্চ, সদর স্ট্রীট গির্জা (CNI Wesleyan Church, Sudder Street Girja)

Image
ভারতীয় জাদুঘরের পাশ দিয়ে সদর স্ট্রিটে ঢুকলে, বাম হাতে লক্ষ্য করা যায় একটা ছোট ছিমছাম চার্চ, লোকমুখে যার পরিচিতি সদর স্ট্রীট গির্জা (Sudder Street Girja) বলে। এই গির্জার প্রতিষ্ঠা করেন ওয়েসলেয়ান মেথডিস্ট মিশনারী রেভারেন্ড জেমস ব্রুডবেন্ট (Rev. James Broodbent)। এই গির্জা তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল সৈনিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটা মেথডিস্ট চার্চ তৈরি করা। তিনি আর Mr. HG Highfield মিলে ১৮৬২ সাল থেকে তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন, শেষ পর্যন্ত ১৮৬৬ সালে ১৫ নম্বর সদর স্ট্রিটের ঠিকানায় এই গির্জার উদ্বোধন হয়। শুরুর সময় থেকেই, প্রতি রবিবার এখানে দুটি করে প্রার্থনাসভা হতো। সকালের প্রার্থনায় আসতেন স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা, আর সন্ধ্যার প্রার্থনায় আসতেন সৈনিক ও ফোর্ট উইলিয়ামের অফিসাররা।  এছাড়াও চার্চে কিছু সামাজিক কাজকর্ম এবং বিদ্যালয়ও চালানো হতো। এখনো সেই স্কুল আছে চার্চের পাশে, St. Thomas Day School.  বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যেসব বিদেশি সৈনিকরা কোলকাতায় এসেছিলেন, তারা নিয়মিত এই চার্চে আসতেন। এখানে তাদের ধর্মীয় বাণী শোনানো হতো, জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হতো, বিশ্রামে

গুরুদুয়ারা বড়া শিখ সঙ্গত, বড়বাজার (Gurudwara Bara Sikh Sangat)

Image
কোলকাতা হলো এমন একটা শহর, যেখানে অনেক রকমের ধর্মের লোকজন মিলেমিশে থাকে। সেরকমই হলেন শিখরা। ওনাদের প্রতিষ্ঠিত অনেক গুরুদুয়ারা সারা কোলকাতা জুড়ে রয়েছে। তবে সেগুলোর মধ্যে, সবথেকে বড়ো এবং সবথেকে পুরোনোটি রয়েছে আমাদের বড়োবাজার এলাকাতে।  ১৭২, এম. জি. রোড, বড়োবাজার। এখানে রয়েছে কোলকাতার সবথেকে পুরোনো গুরুদুয়ারা বড়া শিখ সঙ্গত। তুলাপট্টি এই জায়গাটার নাম। এক ছুটির সকালে, কুদঘাট থেকে প্রথম মেট্রো ধরে, আমি নেমেছিলাম এম. জি. রোডে। সেখান থেকে এক কিলোমিটার মতো হেঁটে পৌঁছালাম এই গুরুদুয়ারা।  সামনের রাস্তাটা এতো ভিড়, যে মাথা তুলে ভালো করে দেখাই যায় না গুরুদুয়ারাটা। গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে, দেওয়ালে সংক্ষিপ্তভাবে লেখা রয়েছে এখানকার ইতিহাস। পূর্বভারতের তার ভ্রমণের সময়, গুরু নানক ১৫১০ সালের ২রা জানুয়ারী, কোলকাতাতে আসেন। যে জায়গাটায় তিনি ছিলেন তার নাম ছিল 'বান সঙ্গত'। এখানে তখন প্রবল মহামারীর প্রকোপ চলছিল। গুরুজী এখানে ১২ দিন থেকে সবার সেবা-শুশ্রূষা করেন, আর তারপর জগন্নাথধামের দিকে রওয়ানা হন। এই 'বান সঙ্গত' -এ, এই গুরুদুয়ারাটি স্থাপন করেন মহারাজা