মেরিটাইম আর্কাইভ ও হেরিটেজ সেন্টার, কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (Maritime Archive and Heritage Centre, Kolkata Port Trust)

কোলকাতা পোর্টের নাম আমরা সকলেই শুনেছি, কিন্তু সবারই ধারণাটা বেশ ঝাপসা এই বিষয়ে। কারণ কোলকাতা পোর্ট একটা রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া হবার জন্য, লোকজন সেখানে যেতে পারে না, তাই ধারণাটাও খুব একটা স্পষ্ট হয় না। অথচ দেখুন, কোলকাতা পোর্ট কিন্তু ভারতের প্রথমদিকের নদীবন্দর।


মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের থেকে বাণিজ্য সনদ লাভের পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা বন্দরের গোড়াপত্তন করে। পরবর্তীকালে ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হলে, ১৮৭০ সালে সরকার বন্দর কমিশন গঠন করে।

কলকাতার উত্থানের সাথে জড়িত ছিল ভারত মহাসাগর এলাকার আন্ত-এশীয় বাণিজ্য কাঠামোয় বড় ধরনের ভাঙন, এবং পূর্ব ভারতে ইংরেজদের উত্থান। নবাবী আমলে ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক কাঠামোটা প্রায় নষ্টই হয়ে গেছিল। পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনে নতুন করে শুরু হয় বৈদেশিক বানিজ্য, যার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে কোলকাতা বা বোম্বাই এর মত বন্দর-শহরগুলো। অবশ্য বন্দর শহর হিসেবে কোলকাতার উত্থানের পেছনে নৌ-গুরুত্ব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কেননা ষোল শতক থেকেই গঙ্গার ভাগীরথী- হুগলি প্রবাহ বরাবর এর ভাটির দিকে বাণিজ্য বসতি ক্রমশ গড়ে উঠছিল।

কলকাতায় বসতি স্থাপনের আগে থেকেই ইংরেজরা জানত যে, ‘সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল উপযোগী স্থানগুলির মধ্যে, কলকাতা ছিল গোবিন্দপুর থেকে গার্ডেন রীচ পর্যন্ত পূর্ব তীর বরাবর সবচেয়ে গভীর জলরাশির এলাকা’, এবং এ অঞ্চলে অতি সহজে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচল করতে পারে। আঠারো শতকে বন্দর শহর হিসেবে কলকাতার উত্থান অনেকাংশেই সহজ হয়েছিল ইংরেজদের দ্বারা ভারতীয় নৌ-বাণিজ্যের দিক পরিবর্তনের কারণে। তবে বন্দরের পর্যাপ্ত কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১৮৭০ সালে কলকাতা বন্দর কমিশন গঠিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এরপর ১৯৬৩ সালের প্রধান বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হলে, কলকাতার বর্তমান পোর্ট ট্রাস্ট বা বন্দর কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়।

এই হলো কোলকাতা পোর্ট (বর্তমানে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী পোর্ট) এর মোটামুটি ইতিহাস। এবার এই ইতিহাসকে যদি নিজের চোখের সামনে জীবন্তরূপে দেখতে হয়, তবে আপনাকে যেতেই হবে ৬ নম্বর স্ট্রান্ড রোড, কোলকাতা ৭০০০০১ এ, যেখানে আছে মেরিটাইম আর্কাইভ ও হেরিটেজ সেন্টার, কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (Maritime Archive and Heritage Centre, Kolkata Port Trust)।


কোলকাতা বন্দরের সৃষ্টি ও বিবর্তনকে বুঝতে হলে, এর থেকে ভালো জায়গা আর নেই। বিভিন্ন ফ্লো-চার্ট নথি, পোস্টার, মডেল ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এখানে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। সাথে আছে একটি সমৃদ্ধ ফ্রি লাইব্রেরি, যেখানে আপনি গিয়ে বসে পড়তে পারবেন। হলঘরগুলো জুড়ে সাজানো আছে বিভিন্ন ধরণের জাহাজের ও ক্রেনের, অনেক ধরণের যন্ত্রাংশের মডেল।


সোমবার থেকে শুক্রবার, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই মেরিটাইম আর্চাইভ ও হেরিটেজ সেন্টার (কেন্দ্রীয় সরকারি ছুটির দিনে বন্ধ)। কোনো প্রবেশমূল্য নেই, আর কর্মচারীরাও খুবই খুশি হন কেউ এলে। তাই পুরোনো কোলকাতা তথা কোলকাতা বন্দরকে চিনতে হলে, অবশ্যই ঘুরে যেতে হবে এখানে।


তথ্যসূত্র:
kolkataporttrust.gov.in/index1.php?layout=1&lang=1&level=1&sublinkid=1429&lid=563

Comments

  1. Interesting 🤟

    ReplyDelete
  2. বহু মূল্যবান এই তথ্য সুন্দর ভাবে ছবি সহ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)