শ্যামবাজারের বড়ুয়া অ্যান্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার আর মটন প্যান্থারাসের গল্প (Barua & dey Fast Food Centre, Shyambazar and Mutton Pantheras)

চপ-কাটলেটের জন্য উত্তর কোলকাতার নাম আমি ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, কিন্তু প্যান্থারাস নামটা একদম নতুন ঠেকেছিল আমার কানে! আর এই প্যান্থারাস বলতে একটাই নাম ও উচ্চারিত হয় উত্তর কোলকাতাতে, শ্যামবাজারের বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার! একদিন অফিসের একটা কাজ ছিল শ্যামবাজার অঞ্চলে, বিকেলের দিকে। কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে, হটাৎই মনে হলো কি খাওয়া যায়! আর যেই না মনে পড়লো, সাথে সাথেই পা বাড়ালাম প্যান্থারাসের খোঁজে। গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখে খুঁজে বের করলাম দোকানটা!

এবার আসা যাক এই মটন প্যান্থারাসের বিশ্লেষণে। আপাতদৃষ্টিতে একে দেখলে আপনার এটিকে একটা স্প্রিং রোল মনে হবে। কিন্তু একটা কামড় বসালেই বুঝবেন এর পেটের পুরের মাহাত্ত্ব! মাটন কিমার সাথে মশলা মিশিয়ে এমন একটা স্বাদ ও সুগন্ধের মেলবন্ধন... আমি একমাত্র এখানেই পেয়েছি। পুরো ক্রেডিট যায় বাংলাদেশের চিটাগাঁও এলাকার রাঁধুনিদের প্রতি! 

রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে কোলকাতায় আসেন এই রাঁধুনিরা, আর সেই সূত্রে তারা দেখেন ইংরেজি খাবারের বানানোর ধরণ। সেই কৌশল রপ্ত করে, দেশীয় মশলার মাধ্যমে বিপ্লব আনেন আঙলো-ইন্ডিয়ান খাবারের সম্ভারে। এরকমই একজন রাঁধুনি ছিলেন নকুল বড়ুয়া, যিনি চাকরি করতেন প্রথমে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল ও পরে থেটা-ফেটা ক্লাবের রান্নাঘরে। বিংশ শতকের প্রথমদিকে যখন কোলকাতায় এই ক্লাব কালচারের অবনতি ঘটতে থাকে, তখন ১৯৩৪ সালে নিজের এই চপ-কাটলেটের ব্যবসা শুরু করেন বড়ুয়াবাবু। পরবর্তীকালে ওনার ছেলে বিভূতিভূষণ বড়ুয়া ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান, সাথে নেন পার্টনার ফটিক চন্দ্র দে কে। পত্তন হয় শ্যামবাজারের বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টারের।

এবার আসি দোকানের বর্ণনায়। শায়ামবাজারের মনীন্দ্র কলেজের উল্টোদিকে, গৌরিমাতা সরণিতে এই দোকানটি, সামনেই আছে দুটি শিবমন্দির। হটাৎ করে দোকানটা দেখলে খেয়াল না করে এগিয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। দোকান এখন খোলে বিকেল সাড়ে চারটায়, বন্ধ হয় মোটামুটি রাত নয়টা নাগাদ, সপ্তাহে সাত দিন। লকডাউনের পরে এখন দোকানের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না, বাইরে থেকেই অর্ডার দিতে হয়। কাগজের প্লেটে করে খাবার আসে, সাথে কিছুটা পেঁয়াজ কুঁচি। বাইরে দাঁড়িয়ে খাও, আর কপাল ভালো থাকলে একটা প্লাস্টিকের টুল পেয়ে যেতে পারেন! প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, এখানে কোনো সস বা কাসুন্দি দেওয়া হচ্ছেনা এখন।

মটন প্যান্থারাসের বাইরেও আরো অনেক আইটেম রাখেন এনারা। ব্রেস্ট কাটলেট, মটন চপ, ডিমের ডেভিল, চিকেন ফ্রাই, চিকেন কাটলেট, ফিশ ফ্রাই, ফিশ রোল, ফিশ চপ আর ফিশ ফিঙ্গারও আছে এদের মেনুকার্ডে। দোকানের মালিকানা এখনো বড়ুয়া আর দে এর হাতেই। 

একই পদ, একই মশলা, একই স্বাদ। তাও ক্রেতাদের ভিড়ে কোনো কমতি হয় না। এভাবেই এগিয়ে চলে একটা ইতিহাস, আর বয়ে চলে বাঙালির খাবারের ঐতিহ্য।

Comments

  1. Dekhi kobe jawa jai. Bhalo lekha

    ReplyDelete
  2. ব্রেস্ট কাটলেট নয় Braised cutlet হবে মনে হয়।

    ReplyDelete
  3. এর উপর দিয়ে কতবার গেছি,কিন্তু দোকানটা চোখে পড়ে নি।এবার যেতে হবেহ

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)

কোলকাতার পার্সি অগ্নি-মন্দিরগুলোর গল্প (The Parsi Fire Temples of Kolkata)

নতুন কোলকাতার পুরোনো ভুতেদের গল্প (Story of the Old Ghosts of New Calcutta)