গি হিং চাইনিজ চার্চ এবং চিনে জুয়াখেলার গল্প (Gee Hing Church and Mahjong Game)

টেরিটিবাজার অঞ্চলে যে কয়টি চাইনিজ মন্দির আছে, তার মধ্যে দুটো মন্দিরে ঢুকতে পারা খুব চাপের! তার মধ্যে প্রথম হলো গি হিং চার্চ (Gee Hing Church)। এর ঠিকানাটা হলো ১৩ নাম্বার ব্ল্যাকবার্ন লেন। কিন্তু ঠিকানা দেখে জীবনেও এটি খুঁজে পাবেন না! এই মন্দির খুঁজে পাবার সহজ রাস্তা হলো চেন আঙ্কেলের কাঠের দোকানটা খুঁজে বের করা। ঠিক এই দোকানের ওপরেই আছে এই চার্চ!


কাঠের দোকানের বামদিকে আছে একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো চিনে ক্লাব, যার নাম 'চুনি থং ক্লাব' (Chooney Thong Club)। 


ছবিতে দোকানের ডান পাশে যে একটা লাল রঙের লোহার গেট দেখছেন, সেটা দিয়ে একটা গলিপথে ঢুকে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় দোতালাতে, সেখানেই আছে দুই কামরার এই মন্দির।


বেশ কিছু পুরোনো চেয়ার আছে এখানে, যার কাঠের কাজ চোখে পড়ার মতো। দুটি দেবতার ছবি আছে এখানে, একজন চাইনিজ যুদ্ধের দেবতা (Kuan Ti) এবং অপরজন সমুদ্র দেবতা (Kwan Kun)। দেবতার আসনের কাঠের সূক্ষ্ম কাজ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়।


পাশের ঘরটিতে আছে একটি চাইনিজ ক্লাব। এখানে সপ্তাহের কাজের দিনগুলো সন্ধ্যাবেলা এবং রবিবার সকালের একটু বেলা করে বসে মাহজং (Mahjong) নামের একটা খেলার আসর। বেশ কয়েকটা বোর্ড পাতা আছে এই খেলার জন্য। চিনেরা এই খেলা টাকা বিনিময় রেখেও খেলে, তাই এটা একধরণের চাইনিজ জুয়াও বলা যায়। তবে এই খেলাটির ইতিহাসও কম চমকপ্রদ নয়।


মাহজং (Mahjong) একটা প্রাচীন চাইনিজ খেলা, যার মূল উপাদান অনেকগুলো ছোট ছোট কিউব। এক সেট মাহজং কিউবের মধ্যে ১৩৬ টা কিউব থাকে, আর প্রতিটি কিউবে আঁকা থাকে কিছু ছবি। আগে এগুলো তৈরী হতো হাতির দাঁত, হাড় ও বাঁশ দিয়ে, এখন তৈরী হয় কাঠ, সেরামিক বা প্লাস্টিক দিয়ে।

শোনা যায়, এই খেলা প্রায় ২৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন, যার পত্তন করেছিলেন কনফুসিয়াস (Confucius), কিন্তু ইতিহাসে এর উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৮০ খৃস্টাব্দ নাগাদ মূলত চীনের তিনটি প্রদেশে... কিয়ানসু (Kiangsu), আনহেই (Anhwei) এবং চেকিয়াং (Chekiang)। ১৯০৫ খৃস্টাব্দের পর থেকে, এই খেলাটি সমগ্র চিনে ছড়িয়ে পড়ে, এবং খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এই খেলাটি চীনের গন্ডি পেরিয়ে জাপান, আমেরিকা ও ব্রিটেনেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, চীনে কমিউনিস্ট শাসনকালে হটাৎই এই খেলা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, আর কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে মাহজং জুয়াখেলার নেশা বাড়িয়ে দিচ্ছে চীনের জনগণের মধ্যে। এর ফলে কোথাও মাহজং ম্যাচ হলে, সরকার থেকে সেই খেলোয়াড়দের গ্রেফতার করা হতো। পরবর্তীকালে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, এবং এই খেলা আবার ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে।


আজকের তারিখে মাহজং পৃথিবীর জনপ্রিয় ইনডোর গেমগুলোর মধ্যে অন্যতম, যার কিউবগুলোর গুলোর টুং টাং শব্দ... আজও ব্ল্যাকবার্ন লেনের গলিপথকে শ্রুতিমধুর করে তোলে।

তথ্যসূত্র:
১. মিস্টার পল ওয়েন, মিস্টার টোনি লি, মিস্টার ওয়াই।
২. kolkatachinatown.com/gee-hing-church/
৩. roundhouse.ca/mahjong-a-brief-history-of-the-game/

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)