ভবানীপুর কবরখানা : একটা মিলিটারি কবরখানার গল্প (Bhawanipore Cemetery : A Military Burial Ground)

SSKM হাসপাতালের যে গেটটা রেসকোর্সের পাশে আছে, তার পাশ দিয়ে দেবেন্দ্র লাল খান রোড (Debendra Lal Khan Road) গেছে ভবানীপুরের দিকে। এই রাস্তা দিয়ে যদি আমরা ভবানীপুরের দিকে হেঁটে যেতে থাকি, তবে ১৫ নাম্বারে এসে ডান হাতে দেখা যায় একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা কবরখানা, যার গেটের ওপরে লেখা আছে -
"BHAWANIPORE CEMETERY - 1907"


আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, ১৯০৭ খৃস্টাব্দে এই কবরখানার পত্তন হয়। কিন্তু না, এই কবরখানার ব্যবহার শুরু হয়  ১৮৬৪ খৃস্টাব্দে, মূলতঃ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য, তাই লোকমুখে এর নাম হয়ে যায় মিলিটারি কবরখানা। বর্তমান ফোর্ট উইলিয়ামের অনেক প্রাক্তন অধিবাসীরা শুয়ে আছেন এখানে চিরঘুমে। ১৯০৭ খৃস্টাব্দে এই কবরখানাকে সরকারিভাবে তকমা দেওয়া হয়, আর তখনই চারদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে, এই বড়ো গেটটা তৈরী করা হয়।


এর কিছুদিন পরেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, আর সেখানে মৃত সৌনিকদের এখানে কবর দেওয়া হতে থাকে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও। এর মধ্যে এখানে অ-সৈনিকদেরও (Civilians) কবর দেওয়া হতে থাকে। পরবর্তীকালে, ১৯৫৪ খৃস্টাব্দে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখানের সব বিশ্বযুদ্ধের কবরগুলোকে আলাদা একটা জায়গায় সংরক্ষণ করা হবে। তাই সেইমতো কবরখানার মাঝে একটা জায়গা বেছে নেওয়া হয়, এবং সেখানে ৯৫টি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কবর আর ৬১৭টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কবর নতুনভাবে সাজিয়ে সংরক্ষণ করা হতে থাকে, নাম দেওয়া হয় “Commonwealth War Graves”। এই সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয় Commonwealth War Graves Commission. প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, এখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একটি কবর আনা হয় ডায়মন্ড হারবারের চিংড়িখালি দুর্গের কবরখানা থেকে, যে দুর্গটির চিহ্ন এখনো দেখা যায় (পড়ুন সেই দুর্গের গল্প, এখানে http://salilhore.blogspot.com/2020/05/chingrikhali-fort-diamond-harbour-myth.html)

কবরখানাটি এখনো ব্যবহার হয়, এবং ২০১৯ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৩৩ জন সাধারণ মানুষের কবর এখানে আছে। এবার আসা যাক বর্তমান অবস্থার দিকে।

কবরখানার এখন গেটের দেওয়ালের ভিতরের দিকে অনেকগুলো অস্থায়ী ঘরবাড়ি তৈরী হয়েছে, যেখানে বিহারী ও হিন্দুস্থানী লোকজনের বাস। সাথে দেখা যায়, তাদের বাড়ির মেয়েরা অনেকগুলো কবরকেই নিজেদের বসার জায়গা ও জামাকাপড় শুকানোর কাজে ব্যবহার করছে! একটু ভিতরের দিকে গেলে দেখা যায়, কবরের ওপরে বসে নেশা করছে কিছু লোকজন। শুধুমাত্র ওই বিশ্বযুদ্ধের কবরগুলোই সংরক্ষণ করা হচ্ছে, আর বাকি কবরগুলোর বেশ খারাপ অবস্থা! সবথেকে অবাক হবার কথা, আমি সেই কবরখানার অধিবাসীদের অস্থায়ী বাথরুম ও কলতলাতে কিছু পুরোনো কবরের ফলক ব্যবহার করতে দেখলাম!


সবাই সবই জানে, কিন্তু আমাদের অজ্ঞতা যে আমরা নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি না।

তথ্যসূত্র:
১. tutorialathome.in/history/bhowanipore-cemetery-christian-jewish-cemeteries
২. kolkatasounds.org/bhawanipur-cemetery/
৩. cwgc.org/visit-us/find-cemeteries-memorials/cemetery-details/92010/Calcutta%20(Bhowanipore)%20Cemetery,%20Kolkata/
৪. timesofindia.com/city/kolkata/at-kolkata-cemetery-blatant-loot-of-history-has-heritage-turning-in-grave/amp_articleshow/72014733.cms

Comments

  1. অনেক কিছু জানা যায়, তোমার লেখায়

    ReplyDelete
  2. Kolkata তে এমন war memorial আছে জানা ছিল না। Kargil বা Imphal এর থেকে সৌন্দর্যে আমরাও কম যাইনা। দেখে আসার ইচ্ছে রইল।

    ReplyDelete
  3. সত্যি আমরা ইতিহাস কে ধরে রাখতে পারছিনা। এসব সবার সামনে আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  4. Dekhe asar eche roilo, jantam na

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো লেখা। শুধু এটিই নয়,ট্যাংরার চীনা কবরখানাও প্রায় বিহারী আর হিন্দুস্থানীদের দখলে চলে গেছে।

    ReplyDelete
  6. একদম অজানা ছিল।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)