Posts

Showing posts from 2024

ডাচ সমাধিস্থল চুঁচুড়া (Dutch Cemetery, Chinsurah)

Image
সপ্তদশ শতকে বাংলা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাবসায়িক কেন্দ্র। সেই কারণে ইউরোপিয়ানদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল আমাদের বাংলা। পোর্তুগিজরা প্রথমে বাংলায় আসে, আর তার পরেই আসে ওলন্দাজরা বা ডাচরা। সেই সূত্রে তারা পত্তন করে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা VOC (Vereenigde Ostindische Compagnie), এবং ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন মুঘল সম্রাটের থেকে ভারতে ব্যাবসা করার অধিকার লাভ করে। ১৬৩৫ সালে তারা চিনসুরাতে (বর্তমানে চুঁচুড়া) বসতি স্থাপন করে; শুরু করে আফিম, সুতো, নুন, মশলা এবং নীলের ব্যাবসা। ১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়াতে একটা ডাচ কারখানা স্থাপিত হয়, যা ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ঘিরে নিয়ে একটা দূর্গে রূপান্তরিত হয়। এর নাম দেওয়া হয় Fort Gustavus, যা ছিল তৎকালীন ডাচ গভর্নর জেনারেল Gustaaf Willem Van Imhoff এর নামে। মোটামুটি ২০০ বছর (১৬১৫-১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ) ডাচরা বাংলায় তাদের উপনিবেশ রেখেছিল। ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে ডাচ কমিশনার B.C.D. Bouman ইংরেজদের হাতে চুঁচুড়ার অধিকার সমর্পণ করেন। এরপরে ইংরেজরা এখানে ডাচ স্থাপত্যের অনেকটাই ভেঙে দিলেও, ডাচ কবরখানা বেঁচে যায় তাদের গ্রাস থেকে। আজকে এই কবর...

পানিহাটি বারো শিব মন্দির ঘাট, সুখচর উত্তর চব্বিশ পরগণা (Panihati Baro Shiv Mandir Ghat, Sukhchar South 24Pgs)

Image
উত্তর চব্বিশ পরগণাতে অবস্থিত পানিহাটির ইতিহাস অনেক পুরোনো। বিপ্রদাস পিপলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল’-এ আমরা উল্লেখ পাই পানিহাটির। এখানে এতো বেশি নদীর ঘাট রয়েছে, যে  ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় যতীন্দ্র মোহন দত্ত লিখেছিলেন, পানিহাটির মতো এতগুলো গঙ্গার ঘাট সম্ভবত বেনারস ছাড়া আর কোথাও নেই। সেরকমই একটা ঘাট নিয়ে আজকে লিখছি আমি। সুখচর অঞ্চলে, হরিশ চন্দ্র দত্ত রোডে রয়েছে একটি সুদৃশ্য বড়ো ঘাট এবং সেটি লাগোয়া ১২টি শিবমন্দির। এটি পরিচিত বারো শিব মন্দির ঘাট হিসেবে। ঘাটের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম পাওয়া যায় শ্রী নবীন চন্দ্র দত্তের, যিনি ছিলেন শ্রী হরিশ চন্দ্র দত্তর সুপুত্র। তবে এই ঘাট প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে একটি করুণ কাহিনী। গঙ্গানদীতে একদিন হরিশচন্দ্র তর্পণ করছিলেন। একজন গর্ভবতী মহিলা তখন কলসি করে জল তুলে আনার সময়, হঠাৎ ঘাটের খাড়া সিঁড়িতে পা পিছলে পড়ে যান। দুর্ঘটনার ফলে ওনার গর্ভপাত ঘটে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মহিলার মৃত্যু হয়।  সম্পূর্ণ বিষয়টি ঘটে হরিশচন্দ্রের চোখের সামনে। তাই তিনি ব্যথিত হয়ে নিজের ছেলে নবীনচন্দ্রকে নির্দেশ দেন একটা এমন ঘাট বানানোর জন্য, যা গর্ভবতী...

কুণ্ডুচৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো, মহিয়ারি আন্দুল হাওড়া (Durga Puja of Kundu Chowdhury Family, Mohiari Andul Howrah)

Image
আন্দুলের মহিয়ারীর কুণ্ডু চৌধুরীদের কথা আমি প্রথম জানতে পারি, একদিন ঘটনাচক্রে কুণ্ডু চৌধুরী ইনস্টিটিউশনে গিয়ে। এনারদের পরিবারে দুর্গাপুজোর বয়স প্রায় তিনশত বছর। এই বাড়ির পুজোর দুইটি বিশেষত্ব রয়েছে। প্রথমত, এখানে বছরে দুবার দুর্গাপুজো হয় (একবার বাসন্তী পুজো আর শরৎকালে অকাল বোধন দুর্গাপুজো)। দ্বিতীয়ত, এখানে পুজোতে বোট (নৌকো) পুজো করা হয়। জানা যায়, কুণ্ডুচৌধুরী পরিবারের জমিদারি ছিল বাংলায় মোটামুটি ৭ টি জেলায়... হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর ও বর্ধমান। পরবর্তীকালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে, বাড়ির বিভিন্ন পুজোর খরচ চালানোর জন্য ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে একটা ট্রাস্ট তৈরি করা হয়, এবং সেই ট্রাস্টের দায়িত্বে আজও পুজো সম্পন্ন হচ্ছে।  দুর্গাপুজো আয়োজন শুরু হয় উল্টোরথের দিন, প্রতিমা তৈরির জন্য বাঁশ কাটা দিয়ে। পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে, প্রতিদিনের চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে। বাড়ির একতলায় ঠাকুরঘরে রয়েছেন লক্ষ্মী জনার্দন, সেখানেই পঞ্চমী পর্যন্ত পুজো হয়। এরপর ষষ্ঠীতে হয় বেলতলাতে পুজো এবং বোধন।  এই...

দত্তচৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো, আন্দুল হাওড়া (Dutta Chowdhury Family Durgapuja, Andul Howrah)

Image
আন্দুল অঞ্চলের এক প্রাচীনতম পরিবারের দুর্গাপুজো হলো দত্তচৌধুরীদের পুজো। চতুর্দ্দশ শতকের শেষ ভাগে এই পরিবারের পূর্বপুরুষ দেবদাস (তেকড়ি) দত্ত, পৈতৃক সম্পদের সাহায্যে এই অঞ্চলে ২৫২ বিঘা জমির উপর তার প্রাসাদ নির্মাণ করেন, এবং সেখানে তাঁর জমিদারি পত্তন করেন। তেকড়ি দত্ত ছিলেন দক্ষিণরাঢ়ীয় সমাজের 'বালির দত্ত' কুলের দ্বাদশ পুরুষ। সেই সময় আন্দুল ছিল মুজঃফরপুর পরগনার অধীনে। তৎকালীন স্বাধীন বাংলার সুলতান তাঁর সেই প্রতিপত্তি বিচার করে তাঁকে সে পরগনার রাজস্ব সংগ্রহকারী পদে নিযুক্ত করে চতুরঙ্গ প্রদান করেছিলেন। সেই চতুরঙ্গ দলধারী থেকে 'চৌধুরী' শব্দ এসেছে। এভাবেই আন্দুল সমাজে দত্তচৌধুরী পরিবারের উত্থান ঘটে। স্থানীয়রা এঁদের 'আন্দুলের চৌধুরী' নামে বেশি চেনে। এই চৌধুরীরাই ছিল আন্দুল জনপদের আদিনৃপতি, একথা আন্দুলাধিপতি রাজা রাজনারায়ণ রায়ও উল্লেখ করে গেছেন।  বর্তমানে আন্দুল দত্তচৌধুরী বংশে যে দুর্গোৎসব দেখা যায় তা শুরু করেছিলেন চৌধুরী রামশরণ দত্ত (১৫৪৮-১৬০৬) ইং ১৫৬৮ সালে। মুজঃফরপুর পরগনার উনি ছিলেন 'বড় কুমার', তথা সষ্টম চৌধুরী। ঘোড়ার আকৃতির সিংহের মহিষমর্দিনীরূপে ...

ইছাপুর নবাবগঞ্জের মন্ডল বাড়ির দুর্গাপুজো, উত্তর ২৪ পরগণা (Durga Puja of Mondal Bari, Ichhapur Nawabganj North 24 Pgs)

Image
এই বাড়ির পুজোর ইতিহাস প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো। ইছাপুরের এই অঞ্চলটি তখন নবাবগঞ্জ হয়ে ওঠেনি, সেটি তখন বাকে-বাজার নামেই পরিচিত ছিল। মূলত নিম্নবর্গীয় মানুষের বসবাস ছিল এখানে। পরে কোনো একজন নবাব তার অভিযানের সময় সৈন্যসামন্ত নিয়ে এখানে মাসখানেক আস্তানা গেড়েছিলেন, সেখান থেকে নাম হয় নবাবগঞ্জ। এই অঞ্চলেই বসতি স্থাপন করেন মন্ডলরা। প্রথমদিকে কৃষির ওপর নির্ভরশীল হলেও, পরবর্তীকালে তারা ব্যবসায়ের দিকেও মনোনিবেশ করেন।  মন্ডল পরিবারের সমৃদ্ধি ঘটে মূলত শ্রীধর মন্ডল এবং বংশীধর মন্ডলের হাত ধরে। এনারা মশলা এবং নুনের ব্যাবসা করে ফুলে ফেঁপে ওঠেন। বাড়ির পাশেই একটি ঘাট তৈরী করেন নদীপথে নিজেদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য, যে ঘাটটি আজও মন্ডল ঘাট নামে বিখ্যাত।  মন্ডল পরিবারের পুজোর ইতিহাস বলতে গেলে, এদের পুজোটা শুরু হয়েছিল ধান্য লক্ষ্মীপুজো দিয়ে। মন্ডলের পূর্বপুরুষ শ্রী রাজগোপাল মন্ডল শুরু করেছিলেন এই লক্ষ্মীপুজো। প্রায় ২৫০ বছর আগে, লক্ষ্মীপুজোর পাশাপাশি দুর্গাপুজো শুরু করেন শ্রী রসময় মন্ডল। প্রথম ১৭ বছর প্রতিমা ছাড়াই, ঘটে পুজো হতে থাকে। তারপর প্রতিমা পুজোর প্রচ...

হুগলি ইমামবাড়া, হুগলি জেলা (Hooghly Imambara, Hooghly District)

Image
হুগলি জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে হুগলি নদী। এই প্রাচীন জেলায় কলোনি স্থাপন করেছিল ফ্রেঞ্চ, ড্যানিশ এবং পর্তুগিজরা। এখানে হুগলি স্টেশনের কাছে রয়েছে হাজি মহম্মদ মহসিনের তৈরি একটি বিরাট আকারের ইমামবাড়া, যার কথা সম্ভবত ভ্রমণপিপাসু মানুষমাত্রই জানেন। এর সাথে, এটি বিখ্যাত পৃথিবী বিখ্যাত একটি ঘড়ির জন্য। ইমামবাড়ার প্রবেশদ্বারের উপর রয়েছে একটি বড় চূড়া, যার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট,সেই চূড়ায় ওঠার জন্য দুইদিকে রয়েছে দুটি সিঁড়ি; আর চূড়ার মাঝ বরাবর অবস্থিত সেই বিস্ময়কর ঘড়ি। লেখাটা শুরুর আগে, ইমামবাড়ার বিষয়ে একটু পরিষ্কার ধারণা দেওয়া দরকার। ইমামবাড়া শব্দের সোজাসুজি মানে হয়, ইমামের বাড়ি। কিন্তু ভারত উপমহাদেশে, ইমামবাড়া বলতে বোঝায় শিয়া-মুসলিমদের মিলনস্থল, যেখানে তারা জমা হয়ে নামাজ পড়তে পারেন এবং ধর্মীয় আচার পালন করতে পারেন। মসজিদের সাথে এখানেই ইমামবাড়ার তফাৎ; কারণ মসজিদে সবাই নামাজ পড়তে পারেন, আর ইমামবাড়া শুধু শিয়াদের জন্য। এবার আসা যাক এই ইমামবাড়ার প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের বিষয়ে। তবে তার আগে জানতে হবে ইরানিয়ান ব্যবসায়ীরা কিভাবে ভারতে নিজে...