পথের পাঁচালীর শ্যুটিং স্পট এবং জোড়া শিবমন্দির বোড়াল (Pather Panchali Shooting Spot and Twin Shiv Temples, Boral Garia)
গড়িয়াতে বোড়াল একটি অতি প্রাচীন জনপদ। এখানে অনেক প্রাচীন মন্দির আছে, সাথে আছে সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা 'পথের পাঁচালী'র শুটিংয়ের জায়গাটি। আমার অনেকদিন আগের একটি ব্লগে আমি এখানকার বিখ্যাত ত্রিপুরসুন্দরী মন্দিরের বিষয়ে লিখেছিলাম। আজকের এই ব্লগে আমি লিখছি বোড়ালের অন্য একটা জায়গা নিয়ে।
১৯৫৫ সালের ২৬শে আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল 'পথের পাঁচালী'। বাংলা সিনেমাকে ছকের গণ্ডি পেরিয়ে হাঁটার অভ্যেস করিয়েছে এই সিনেমা। আর এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমরা আপ্লুত হয়ে যাই অহরহ। শ্যুটিং হয়েছিল এখানকার বকুলতলা নামের একটি জায়গায়। ঠিক কোন জায়গাটা শ্যুটিং হয়েছিল, সেটা স্থানীয় লোকজন ছাড়া বিশেষ কেউ বলতে পারেন না। এর কারণ হলো প্রচুর নতুন লোক এসেছেন এই অঞ্চলে। কিন্তু গুগলে এই জায়গাটা নির্দিষ্ট করা আছে, তাই আমি সেটা ধরেই পৌঁছেছিলাম। সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলাম, অনেক বাঁক ঘুরে সত্যজিৎ রায়ের একখানা আবক্ষ মূর্তির কাছে পৌঁছে বুঝলাম, এসে গেছি সিনেমার তীর্থস্থানে। এখানে বলে রাখি, যিনি এত পারফেকশনিস্ট ছিলেন, তাঁর মূর্তিটা অনেক কষ্টকল্পনা করেই চিনতে হল! এই মূর্তির লাগোয়া রয়েছে অপু-দূর্গার বাড়ি, পুকুর (বর্তমানে ডোবা), এবং বাঁশবন। এই বাঁশবনের জন্যই জায়গাটা কেমন ঝুপসি হয়ে রয়েছে, তেমন আলো ঢোকে না। তবে বাড়িটি এখন আর ভগ্নকুটির নেই, বরং পাকাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। তবে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পেলাম না।
এর উল্টোদিকে, রাস্তার ওপারে আছে বকুলতলা মাঠ, যেখানে এখনো বর্তমান আছে সেই জোড়া শিব মন্দির, যেখানে হরিহর গ্রাম ছাড়ার আগে প্রার্থনা করেছিল। এই মন্দিরগুলো বেশ প্রাচীন, প্রতিষ্ঠাসাল ১৬৯৮ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দ। প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন স্থানীয় জমিদার টীকারাম ঘোষ। মন্দিরের গায়ে এখনো কিছু কিছু টেরাকোটার কাজ দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে যেখানেই সংস্কারের জন্য হাত দেওয়া হচ্ছে, সেখানেই সিমেন্ট লেপে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মন্দিরের গায়ের সমস্ত কারুকাজ লোপ পাচ্ছে। দুটি মন্দিরের ভিতরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ, যেগুলোর উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট। মন্দিরের চারদিকে বাড়িঘর হয়ে যাওয়ার জন্য, মাঠটাও ছোট হয়ে গেছে। মন্দিরের ধারে কিছু মদের খালি বোতলও পরে থাকতে দেখলাম!
এখন বকুলতলা থেকে অটো ধরে কবি নজরুল মেট্রো পৌঁছে যাওয়া যায়। মেট্রোর জন্য বোড়ালে এখন ফ্ল্যাটের দাম অনেক। পুকুর বুজিয়ে সব কমপ্লেক্স হচ্ছে। চিনিবাস ময়রা, পাঠশালার গুরুমশাই বা ‘এক পয়সার মুড়ি’র নিশ্চিন্দিপুর হিসেবে বোড়ালকে কল্পনা করাটা আজ বেশ কষ্টকর। চিন্তা হল, প্রোমোটারদের আগ্রাসী হাত থেকে কত দিন টিকে থাকবে অপু-দুর্গাদের স্মৃতি বিজড়িত এই ভিটে! দুর্গার মৃত্যুর পর হরিহর কাজের খোঁজে সপরিবার গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল শহরে। যে কোনো দিনই স্বাচ্ছন্দ্য আর লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হারিয়ে যেতে পারে দরিদ্র হরিহরের সেই জরাজীর্ণ কুটিরের শেষ স্মৃতিটুকুও। বাংলা ছবিও ইদানীং শ্যুটিং করতে আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা যায়। আচ্ছা, এভাবেই কি হয় মাইগ্রেশন?
১৯৫৫ সালের ২৬শে আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল 'পথের পাঁচালী'। বাংলা সিনেমাকে ছকের গণ্ডি পেরিয়ে হাঁটার অভ্যেস করিয়েছে এই সিনেমা। আর এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমরা আপ্লুত হয়ে যাই অহরহ। শ্যুটিং হয়েছিল এখানকার বকুলতলা নামের একটি জায়গায়। ঠিক কোন জায়গাটা শ্যুটিং হয়েছিল, সেটা স্থানীয় লোকজন ছাড়া বিশেষ কেউ বলতে পারেন না। এর কারণ হলো প্রচুর নতুন লোক এসেছেন এই অঞ্চলে। কিন্তু গুগলে এই জায়গাটা নির্দিষ্ট করা আছে, তাই আমি সেটা ধরেই পৌঁছেছিলাম। সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলাম, অনেক বাঁক ঘুরে সত্যজিৎ রায়ের একখানা আবক্ষ মূর্তির কাছে পৌঁছে বুঝলাম, এসে গেছি সিনেমার তীর্থস্থানে। এখানে বলে রাখি, যিনি এত পারফেকশনিস্ট ছিলেন, তাঁর মূর্তিটা অনেক কষ্টকল্পনা করেই চিনতে হল! এই মূর্তির লাগোয়া রয়েছে অপু-দূর্গার বাড়ি, পুকুর (বর্তমানে ডোবা), এবং বাঁশবন। এই বাঁশবনের জন্যই জায়গাটা কেমন ঝুপসি হয়ে রয়েছে, তেমন আলো ঢোকে না। তবে বাড়িটি এখন আর ভগ্নকুটির নেই, বরং পাকাবাড়ির চেহারা নিয়েছে। তবে বাড়িতে ঢোকার অনুমতি পেলাম না।
এর উল্টোদিকে, রাস্তার ওপারে আছে বকুলতলা মাঠ, যেখানে এখনো বর্তমান আছে সেই জোড়া শিব মন্দির, যেখানে হরিহর গ্রাম ছাড়ার আগে প্রার্থনা করেছিল। এই মন্দিরগুলো বেশ প্রাচীন, প্রতিষ্ঠাসাল ১৬৯৮ শকাব্দ অর্থাৎ ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দ। প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন স্থানীয় জমিদার টীকারাম ঘোষ। মন্দিরের গায়ে এখনো কিছু কিছু টেরাকোটার কাজ দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে যেখানেই সংস্কারের জন্য হাত দেওয়া হচ্ছে, সেখানেই সিমেন্ট লেপে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে মন্দিরের গায়ের সমস্ত কারুকাজ লোপ পাচ্ছে। দুটি মন্দিরের ভিতরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ, যেগুলোর উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট। মন্দিরের চারদিকে বাড়িঘর হয়ে যাওয়ার জন্য, মাঠটাও ছোট হয়ে গেছে। মন্দিরের ধারে কিছু মদের খালি বোতলও পরে থাকতে দেখলাম!
এখন বকুলতলা থেকে অটো ধরে কবি নজরুল মেট্রো পৌঁছে যাওয়া যায়। মেট্রোর জন্য বোড়ালে এখন ফ্ল্যাটের দাম অনেক। পুকুর বুজিয়ে সব কমপ্লেক্স হচ্ছে। চিনিবাস ময়রা, পাঠশালার গুরুমশাই বা ‘এক পয়সার মুড়ি’র নিশ্চিন্দিপুর হিসেবে বোড়ালকে কল্পনা করাটা আজ বেশ কষ্টকর। চিন্তা হল, প্রোমোটারদের আগ্রাসী হাত থেকে কত দিন টিকে থাকবে অপু-দুর্গাদের স্মৃতি বিজড়িত এই ভিটে! দুর্গার মৃত্যুর পর হরিহর কাজের খোঁজে সপরিবার গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল শহরে। যে কোনো দিনই স্বাচ্ছন্দ্য আর লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হারিয়ে যেতে পারে দরিদ্র হরিহরের সেই জরাজীর্ণ কুটিরের শেষ স্মৃতিটুকুও। বাংলা ছবিও ইদানীং শ্যুটিং করতে আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা যায়। আচ্ছা, এভাবেই কি হয় মাইগ্রেশন?
Comments
Post a Comment