কলকাতা চাইনিজ বৌদ্ধ মন্দির, যশোর রোড (The Calcutta Chinese Buddhist Temple, Jessore Road)

দমদম অঞ্চলে যশোর রোডের ওপরে রয়েছে একটি বাস স্টপ, যার নাম চিনামন্দির। এই নাম শুনেই আমার কৌতুহল হয়েছিল, এখানে নিশ্চই কোনো চিনেদের মন্দির আছে এবং সেটা খুব সম্ভব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য। তাই একদিন সময় করে খোঁজ নিতে গেছিলাম এখানে। বাইরে থেকে দেখলে একটি দোতলা বাড়ি মনে হলেও, ছাদের রেলিং বৌদ্ধ মনাস্ট্রির মতো কারুকার্যপূর্ণ। একতলায় রয়েছে একটি হলঘর এবং চাইনিজে লেখা কিছু দেওয়াল ফলক, যেখানে এই মন্দিরের জন্য যারা অর্থদান করেছেন তাদের নাম চিনে ভাষায় খোদাই করা রয়েছে।

সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠলে প্রথমে পরে একটা টানা বারান্দা। অন্যান্য চিনে মন্দিরের মতোই এখানে লাল এবং হলুদ রঙের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। বারান্দার লাগোয়া রয়েছে একটা বড়ো হলঘর এবং সেটাই গর্ভগৃহ। তার মধ্যেই রয়েছে চারটি বিভিন্ন ধরণের বুদ্ধমূর্তি (কাঁচের বাক্সের মধ্যে)। তেরিটি বাজারের চিনে মন্দিরগুলোর মধ্যে যেমন অনেক সূক্ষ্ম কাঠের কাজ দেখা যায়, এখানে এরকম কিছু নেই। মন্দিরসজ্জা একদমই ছিমছাম। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হলো, এই মন্দিরটি বয়সের তুলনায় অনেক নবীন। কলকাতা নিবাসী চাইনিজ সম্প্রদায় থেকে ২৫শে ফেব্রুয়ারী ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১২ই অক্টোবর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি আরো বড়ো করে সংস্কার করা হয়।

এই প্রসঙ্গে একটা বিষয় বলে রাখি। কলকাতার পুরোনো চিনে মন্দিরগুলোকে সমস্তই চাইনিজ চার্চ বলা হয়, এর কারণ সেই সময়ে ইংরেজরা শুধু এদেশীয়দের ধর্মস্থানকেই মন্দির বা মসজিদ বলতো। যেহেতু আলোচ্য মন্দিরটি বয়সে অনেক নবীন, তাই এটি মন্দির হিসেবেই পরিচয় পেয়েছে। 

মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে রয়েছে কাছের শো কেস, যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে প্রচুর পুঁথি। একটি অদ্ভুতদর্শন কাঠের বাদ্যযন্ত্র রয়েছে টেবিলে, আর জ্বলছে প্রদীপ। আলাপ হলো মন্দিরের বর্তমান গুরুমা টি নেগীর সাথে। সাথে পরিচয় করলাম মিসেস চাং এবং তার পরিবারের মহিলাদের সাথে, যিনি মন্দিরের আগামী অনুষ্ঠানের জন্য সাজসজ্জা করছিলেন। প্রত্যেকের ব্যবহার খুবই ভালো, এবং আমাকে প্রসাদ হিসেবে ওনারা কমলালেবু দিলেন।

মন্দিরটি সকল জাতির লোকেদের জন্য তার দ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছে। তবে শুধু সকালের দিকে ১১ টা পর্যন্ত সেটি খোলা থাকে, আর বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ রাখা হয়। তবে যশোর রোডের জ্যাম-জটের মধ্যেও যে এরকম একটা শান্ত সুন্দর মন্দির থাকতে পারে, সেটা দেখে আমি সত্যি খুব তৃপ্ত হয়েছিলাম।

তথ্যসহায়তা: মন্দির সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য আমি পেয়েছি গুরুমা টি নেগী এবং মিসেস চাং- এর থেকে।

Comments

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)