Posts

Showing posts from January, 2021

জাদুসম্রাটের জাদুঘরে (Magician P. C. Sorcar Museum, Kolkata)

Image
ঘড়-ঘড় শব্দে ২৪/২৯ ট্রামটা এসে থামলো বিজন সেতুর পাশে। সামনেই গড়িয়াহাট মলে ঢোকার গেট। এবার আমরা চলে যাবো রাস্তার উল্টোদিকের ফুটপাথে, একটা বিশেষ বাড়ির কাছে। চারতলা ছোট বাড়িটার বিশেষ কিছু আপনার চোখে পড়বে না, যতক্ষণ না আপনি বাড়ির নেমপ্লেটটা দেখবেন! সেখানে লেখা আছে... "P. C. SORCAR JADUSAMRAT P. C. SORCAR SARANI CALCUTTA - 700 019 " ঠিক ধরেছেন। এই বাড়িটিই সেই বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর পি সি সোরকারের বসতবাড়ি! এই মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা মোটামুটি জানলেও, আরেকবর বরং জেনে নি ওনার জীবন সম্পর্কে। বাঙালির জাদুবিদ্যা চর্চার ইতিহাসে যে নামটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তা হলো স্বর্গীয় প্রতুল চন্দ্র সরকার বা পি সি সরকার। অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়, ভগবানচন্দ্র সরকার ও কুসুমকামিনীদেবীর প্রথম সন্তান প্রতুলের জন্ম হয় ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। বাড়ির কাছেই শিবনাথ হাই স্কুলে পড়াশোনার শুরু প্রতুলের। যাতায়াতের পথে একটা ঝিলের দু’পাশে ছিল মাদারিদের বাস। তাদের কাছেই হয় প্রতুলের জাদুবিদ্যার হাতেখড়ি। তখনকার সমাজ জাদুকরদের খুব একটা সুনজরে দেখত

গৌরিশঙ্করের নিরামিষ মশলা ঘুগনি, বউবাজার

Image
স্ট্রীট ফুড চিরকালই আমার প্রিয়। তবে লকডাউনের সময়ে বাইরে না খেয়ে, সুফল হিসেবে দেখলাম বেশ ৫ কিলো ওজন কমে গেল! তাই আজকাল বাইরে খাওয়াও কমিয়ে দিয়েছি! তবে হ্যাঁ, বৌবাজারের রাস্তায় গেলে, এই গৌরীশংকর ঘুগনিদাদার নিরামিষ মশলা ঘুগনি আমি কখনোই ছাড়ি না! বেলা যখন গড়িয়ে আসে, চশমার দোকানগুলোর আলো জ্বলে ওঠে, অফিসফেরতা বাবুরা দৌড়াতে থাকেন হাওড়া-শিয়ালদা-সেন্ট্রাল স্টেশনের দিকে... তখন ধীরে ধীরে ভিড় জমতে শুরু করে এই ফুটপাথের অস্থায়ী দোকানটিতে। ১০টাকা-১৫টাকা-২০টাকা... এই তিনটি দামে পাওয়া যায় ঘুগনি। এবার ঘুগনির বর্ণনায় আসি। স্টোভের ওপরে কাঁসার থালায় স্তূপাকৃতি ঘুগনি আর আলুর মিশ্রণ। তাতে একটু একটু জল দিয়ে, আর নানান ভাজা মশলা দিয়ে... নরম করে মাখা হয় সেই মিশ্রণ। ঘুগনির রং তখন হয়ে যায় কালচে খয়েরি! এই বিশেষ মশলাই কিন্তু ঘুগনির আসল সিক্রেট! এবার সেই মশলা ঘুগনির মধ্যে আলাদা করে কারেন্ট-নুন, শুকনোলংকা গুঁড়ো, তেঁতুল গোলা, লেবুর রস দিয়ে মেখে, কাঁচালংকা-টমেটো-পেঁয়াজ-ধনেপাতা কুঁচি ছড়িয়ে পরিবেশন! সাথে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে এক ফালি নারকোলের টুকরো স্বমহিমায় বিরাজমান! এবার প্রথম চামচ ঘুগনিটা যখন নিজের

রাজা রামমোহন রায় মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, কোলকাতা (Raja Rammohun Roy Memorial Museum, Kolkata)

Image
উত্তর কোলকাতার Amherst Street দিয়ে হেঁটে গেলে, 85A নম্বর বাড়িটার সামনে এলে আপনাকে থমকে দাঁড়াতে হবে। এই বাড়িটা এমন একজনের পারিবারিক বাড়ি, যার কাছে প্রতিটি হিন্দু মেয়ে কৃতজ্ঞ থাকবে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আধুনিক এক ভারতের। দেশের মানুষকে অতীতমুখী, মধ্যযুগীয় মানসিকতার গণ্ডি থেকে বের করে এনে এক নতুন যুগের জীবন দর্শনের আলো দেখানোই ছিল উদ্দেশ্য। গভীর ইতিহাস চেতনা, দৃঢ়তা আর ঈশ্বরবিশ্বাস তাঁর জীবন সংগ্রামে বার বার প্রকাশ পেয়েছে। তবু, তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তৎকালীন হিন্দু পণ্ডিতসমাজ তাঁকে ‘পাষণ্ড’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘বকধূর্ত’, ‘কাপটিক’, কিংবা ‘নগরান্তবাসী’ নামে সম্বোধন করেছিলেন। এমনকী, এক সময় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের গোঁড়া, ধর্মান্ধ, অসহিষ্ণু কিছু মানুষ তাঁর প্রাণনাশেরও চেষ্টা করেছিল। সে জন্য তাঁকে কম হেনস্থাও হতে হয়নি। তবু, চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষকে ভালবেসে, বদ্ধ এই সমাজের মধ্যে আলোড়ন তুলে তিনি চেয়েছিলেন সমাজ ব্যবস্থার ক্ষতিকারক নানা দিক বদলে ফেলতে। তিনি রাজা রামমোহন রায়। আজ রাস্তাটির নাম বদলে তার নামেই হয়েছে রাজা রামমোহন সরণি। বাড়ির নাম্বার একই আছে, আর এই বাড়িটি হয়েছে 'রাজ

শ্যামবাজারের বড়ুয়া অ্যান্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার আর মটন প্যান্থারাসের গল্প (Barua & dey Fast Food Centre, Shyambazar and Mutton Pantheras)

Image
চপ-কাটলেটের জন্য উত্তর কোলকাতার নাম আমি ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, কিন্তু প্যান্থারাস নামটা একদম নতুন ঠেকেছিল আমার কানে! আর এই প্যান্থারাস বলতে একটাই নাম ও উচ্চারিত হয় উত্তর কোলকাতাতে, শ্যামবাজারের বড়ুয়া এন্ড দে ফাস্ট ফুড সেন্টার! একদিন অফিসের একটা কাজ ছিল শ্যামবাজার অঞ্চলে, বিকেলের দিকে। কাজ শেষ হয়ে যাবার পরে, হটাৎই মনে হলো কি খাওয়া যায়! আর যেই না মনে পড়লো, সাথে সাথেই পা বাড়ালাম প্যান্থারাসের খোঁজে। গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখে খুঁজে বের করলাম দোকানটা! এবার আসা যাক এই মটন প্যান্থারাসের বিশ্লেষণে। আপাতদৃষ্টিতে একে দেখলে আপনার এটিকে একটা স্প্রিং রোল মনে হবে। কিন্তু একটা কামড় বসালেই বুঝবেন এর পেটের পুরের মাহাত্ত্ব! মাটন কিমার সাথে মশলা মিশিয়ে এমন একটা স্বাদ ও সুগন্ধের মেলবন্ধন... আমি একমাত্র এখানেই পেয়েছি। পুরো ক্রেডিট যায় বাংলাদেশের চিটাগাঁও এলাকার রাঁধুনিদের প্রতি!  রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে কোলকাতায় আসেন এই রাঁধুনিরা, আর সেই সূত্রে তারা দেখেন ইংরেজি খাবারের বানানোর ধরণ। সেই কৌশল রপ্ত করে, দেশীয় মশলার মাধ্যমে বিপ্লব আনেন আঙলো-ইন্ডিয়ান খাবারের সম্ভারে। এরকমই একজন রাঁধুনি ছিলেন ন

মেরিটাইম আর্কাইভ ও হেরিটেজ সেন্টার, কোলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট (Maritime Archive and Heritage Centre, Kolkata Port Trust)

Image
কোলকাতা পোর্টের নাম আমরা সকলেই শুনেছি, কিন্তু সবারই ধারণাটা বেশ ঝাপসা এই বিষয়ে। কারণ কোলকাতা পোর্ট একটা রেস্ট্রিক্টেড এরিয়া হবার জন্য, লোকজন সেখানে যেতে পারে না, তাই ধারণাটাও খুব একটা স্পষ্ট হয় না। অথচ দেখুন, কোলকাতা পোর্ট কিন্তু ভারতের প্রথমদিকের নদীবন্দর। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের থেকে বাণিজ্য সনদ লাভের পর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা বন্দরের গোড়াপত্তন করে। পরবর্তীকালে ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ সরকারের হাতে হস্তান্তরিত হলে, ১৮৭০ সালে সরকার বন্দর কমিশন গঠন করে। কলকাতার উত্থানের সাথে জড়িত ছিল ভারত মহাসাগর এলাকার আন্ত-এশীয় বাণিজ্য কাঠামোয় বড় ধরনের ভাঙন, এবং পূর্ব ভারতে ইংরেজদের উত্থান। নবাবী আমলে ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক কাঠামোটা প্রায় নষ্টই হয়ে গেছিল। পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনে নতুন করে শুরু হয় বৈদেশিক বানিজ্য, যার মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে কোলকাতা বা বোম্বাই এর মত বন্দর-শহরগুলো। অবশ্য বন্দর শহর হিসেবে কোলকাতার উত্থানের পেছনে নৌ-গুরুত্ব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, কেননা ষোল শতক থেকেই গঙ্গার ভাগীরথী- হুগলি প্রবাহ বরাবর এর ভাটির দিকে বাণিজ্য বসতি ক্রমশ গড়ে উঠ