Posts

Showing posts from October, 2020

একটা বিশেষ কবর ও ভারতীয়দের মুষ্টিযুদ্ধের সূত্রপাত (A Special Grave, and The Starting of Indian Boxing)

Image
আগের ব্লগেই আমি লিখেছি, ভবানীপুর কবরখানা নিয়ে (পড়তে হলে দেখুন এই লিঙ্কে http://salilhore.blogspot.com/2020/10/bhawanipore-cemetery-military-burial.html) ।  সেখানে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একটা অদ্ভুত কবর আমার চোখে পড়ে, যেখানে একজোড়া বক্সিং গ্লাভস খোদাই করা। কবরটির অবস্থা অনেকটাই ভালো রয়েছে, আর তার ওপরে লেখা রয়েছে - "IN MEMORY OF P. L. ROY THE FATHER OF INDIAN BOXING" ওই মুহূর্তে আমার বেশ কৌতূহল হয়, আর সেটা নিয়ে একটু খোঁজখবর করতেই পাই এক ভুলে যাওয়া বিখ্যাত বাঙালির নাম... পরেশ লাল রায়। পরেশলাল রায় বর্তমান বাংলাদেশের বাখরগঞ্জ জেলায় লাখুটিয়া গ্রামে ২০ ডিসেম্বর ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই শিক্ষাদীক্ষা সবই ইংল্যান্ডে। ১০ বছর বয়সে বক্সিংয়ের তালিম নেন কেমব্রিজের বিখ্যাত কোচ বিলি চাইল্ডেসের কাছে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি.এ. পাশ করেন। ফেদারওয়েট বিশ্বচ্যাম্পিয়ান জিম ড্রিসকল পরে স্বেছায় তার শিক্ষাভার গ্রহণ করেন। বিলেতে পড়ার সময় তিনি বক্সিং শিক্ষা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পলস স্কুলে পড়

ভবানীপুর কবরখানা : একটা মিলিটারি কবরখানার গল্প (Bhawanipore Cemetery : A Military Burial Ground)

Image
SSKM হাসপাতালের যে গেটটা রেসকোর্সের পাশে আছে, তার পাশ দিয়ে দেবেন্দ্র লাল খান রোড (Debendra Lal Khan Road) গেছে ভবানীপুরের দিকে। এই রাস্তা দিয়ে যদি আমরা ভবানীপুরের দিকে হেঁটে যেতে থাকি, তবে ১৫ নাম্বারে এসে ডান হাতে দেখা যায় একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা কবরখানা, যার গেটের ওপরে লেখা আছে - "BHAWANIPORE CEMETERY - 1907" আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, ১৯০৭ খৃস্টাব্দে এই কবরখানার পত্তন হয়। কিন্তু না, এই কবরখানার ব্যবহার শুরু হয়  ১৮৬৪ খৃস্টাব্দে, মূলতঃ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য, তাই লোকমুখে এর নাম হয়ে যায় মিলিটারি কবরখানা। বর্তমান ফোর্ট উইলিয়ামের অনেক প্রাক্তন অধিবাসীরা শুয়ে আছেন এখানে চিরঘুমে। ১৯০৭ খৃস্টাব্দে এই কবরখানাকে সরকারিভাবে তকমা দেওয়া হয়, আর তখনই চারদিকে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে, এই বড়ো গেটটা তৈরী করা হয়। এর কিছুদিন পরেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, আর সেখানে মৃত সৌনিকদের এখানে কবর দেওয়া হতে থাকে। একই ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও। এর মধ্যে এখানে অ-সৈনিকদেরও (Civilians) কবর দেওয়া হতে থাকে। পরবর্তীকালে, ১৯৫৪ খৃস্টাব্দে সিদ্ধান্

চন্গী ডং থিয়েন হাউ চার্চ : টেরিটিবাজারের একমাত্র হাক্কা মন্দির (Choonghee Dong Thien Haue Church : The only Hakka Temple in Tiretta Bazar)

Image
টেরিটিবাজার অঞ্চলে যে কয়টি চাইনিজ মন্দির আছে, তার মধ্যে দুটো মন্দিরে ঢুকতে পারা খুব চাপের! তার মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো চন্গী ডং থিয়েন হাউ চার্চ (Choonghee Dong Thien Haue Church)। ইংরেজী ১৮৫৮-৫৯ সালে তৈরী এই চার্চের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, টেরিটিবাজারের অন্যান্য চীনে চার্চগুলো মূলতঃ ক্যান্টনিজদের হলেও, এটি একটি হাক্কাদের চার্চ। মন্দিরটির ঠিকানা 32 Black Burn Lane। তবে এই চার্চটিও খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। যেখানে ব্ল্যাকবার্ন লেন শেষ হচ্ছে এবং ডামজেন লেন শুরু হচ্ছে, সেখানেই রাস্তার ওপরে একটা দোতলা বাড়িতে এই মন্দিরটি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি বেশ কারুকার্যময়, আর একটা জিনিষ উল্লেখ্য যে এই গেটে চার্চের নামের ফলকের পাশেই একটা ফুলের ডিজাইন লক্ষণীয়, যা সাধারণত হিন্দু মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। দিনের বেলা মন্দিরের একতলাতে রাস্তার কুকুরদের আড্ডা চলতে থাকে (আমি কয়েকবার ঢোকার চেষ্টা করে তাড়া খেয়েছি!) সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলে মন্দির।   মন্দিরে একটি বারান্দা ও দুটি ঘর আছে, যেখানে প্রচুর চাইনিজ দে

গি হিং চাইনিজ চার্চ এবং চিনে জুয়াখেলার গল্প (Gee Hing Church and Mahjong Game)

Image
টেরিটিবাজার অঞ্চলে যে কয়টি চাইনিজ মন্দির আছে, তার মধ্যে দুটো মন্দিরে ঢুকতে পারা খুব চাপের! তার মধ্যে প্রথম হলো গি হিং চার্চ (Gee Hing Church)। এর ঠিকানাটা হলো ১৩ নাম্বার ব্ল্যাকবার্ন লেন। কিন্তু ঠিকানা দেখে জীবনেও এটি খুঁজে পাবেন না! এই মন্দির খুঁজে পাবার সহজ রাস্তা হলো চেন আঙ্কেলের কাঠের দোকানটা খুঁজে বের করা। ঠিক এই দোকানের ওপরেই আছে এই চার্চ! কাঠের দোকানের বামদিকে আছে একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরোনো চিনে ক্লাব, যার নাম 'চুনি থং ক্লাব' (Chooney Thong Club)।  ছবিতে দোকানের ডান পাশে যে একটা লাল রঙের লোহার গেট দেখছেন, সেটা দিয়ে একটা গলিপথে ঢুকে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় দোতালাতে, সেখানেই আছে দুই কামরার এই মন্দির। বেশ কিছু পুরোনো চেয়ার আছে এখানে, যার কাঠের কাজ চোখে পড়ার মতো। দুটি দেবতার ছবি আছে এখানে, একজন চাইনিজ যুদ্ধের দেবতা (Kuan Ti) এবং অপরজন সমুদ্র দেবতা (Kwan Kun)। দেবতার আসনের কাঠের সূক্ষ্ম কাজ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। পাশের ঘরটিতে আছে একটি চাইনিজ ক্লাব। এখানে সপ্তাহের কাজের দিনগুলো সন্ধ্যাবেলা এব

ময়দার পাতালভেদী দক্ষিণাকালীর গল্প (Moydah Pantal Bhedi Moydanabeshwari Kali Mandir)

Image
কোলকাতা থেকে ৫০ কিমি দূরে, শিয়ালদা স্টেশন থেকে লক্ষিকান্তপুর লোকাল ট্রেনে বহরু স্টেশনে নেমে, ভ্যান রিকশা করে পূর্বদিকে তিন কিমি মতো গেলে একটা গ্রাম আছে, যার নাম ময়দা। এইরকম অদ্ভুত নামের নেপথ্যে আছে একটা গল্প।  দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার তাড়দহ এবং মেদিনীপুরের গেওখালিতে একসময় পর্তুগিজদের বসতি ছিল। সেই সময় এই অঞ্চল দিয়ে গঙ্গার একটা ধারা প্রবাহিত হতো। সেই পথেই পর্তুগিজরা এই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে, আর এই গ্রাম একটি উল্লেখযোগ্য বানিজ্যকেন্দ্র হয়ে ওঠে। বলা হয়, পর্তুগিজ শব্দ 'মাদিয়া' থেকেই এই গ্রামের নাম হয় 'ময়দা'। শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচরিতে আছে -- "... বহরুর নিকটবর্তী আদি গঙ্গার পূর্ব তীরবর্তী, 'ময়দা' ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। কারণ ইহা একটি রেভিনিউ পরগণার কেন্দ্রীয় দফতর ছিল, এবং পর্তুগিজদের একটি বন্দর ছিল।" এছাড়াও কবি কৃষ্ণরাম দাসের রায়মঙ্গল কাব্যেও ময়দা গ্রামের উল্লেখ পাওয়া যায়। ময়দা গ্রামের পূর্বদিকে উত্তর থেকে দক্ষিণ বরাবর প্রসারিত ছিল একটা প্রাচীন রাস্তা, যার নাম ছিল 'দ্বারির জাঙ্গাল'। আদিগঙ্গার তীর বরাবর কালীঘাট থেকে ছত্রভোগ পর্যন্ত এই রাস্তার বিস