কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস, ভবানীপুর কবরখানা (Commonwealth War Graves, Bhawanipore Cemetery)
SSKM হাসপাতালের যে গেটটা রেসকোর্সের পাশে আছে, তার পাশ দিয়ে দেবেন্দ্র লাল খান রোড (Debendra Lal Khan Road) গেছে ভবানীপুরের দিকে। এই রাস্তা দিয়ে যদি আমরা ভবানীপুরের দিকে হেঁটে যেতে থাকি, তবে ১৫ নাম্বারে এসে ডান হাতে দেখা যায় একটা উঁচু পাঁচিল ঘেরা কবরখানা, যার গেটের ওপরে লেখা আছে -
"BHAWANIPORE CEMETERY - 1907".
১৮৬৪ সালে মূলত ফোর্ট উইলিয়ামের সামরিক অধিবাসীদের জন্য এই কবরখানা তৈরি হলেও, পরবর্তীকালে এখানে অসামরিক লোকজনকেও সমাধিস্থ করা হতে থাকে। এই কবরখানার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলো আমার অন্য একটা ব্লগ রয়েছে, সুবিধামতো সেটা পড়ে নিতে পারেন সেখানে। আমি এই ব্লগে আলোচনা করবো এখানকার কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস নিয়ে।
কবরখানা মূল প্রবেশপথ দিয়ে কিছুটা ঢুকে, সোজা ২০০ মিটার মতো গেলে একটা লোহার জালের রেলিং দিয়ে ঘেরা বর্গাকার জায়গা আছে। এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের কবরগুলো রয়েছে। কলকাতায় একমাত্র এখানেই আপনি সাজানো অবস্থায় সৈনিকদের সমাধি দেখতে পারেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কলকাতায় বহু বিদেশী সৈনিকের আগমন ঘটে। এখানে ৪৭ নম্বর জেনারেল হাসপাতাল বলে একটা হাসপাতালেরও উল্লেখ পাওয়া যায়, যার অস্তিত্ব ছিল ১৯৪৩ সালের জানুয়ারি মাসে থেকে ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যন্ত। এর ফলে কলকাতায় মৃত সৈনিকদের এই কবরখানাতেই সমাধিস্থ করা হতে থাকে।
প্রথমদিকে সামরিক ও অসামরিক সমাধিগুলো সারা কবরখানা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। পরে ১৯৫৪ সালে কর্তৃপক্ষ কবরখানার ভিতরে কিছু জায়গা পরিষ্কার করা শুরু করে। সেই কারণে ভিতরে যে অংশে সবথেকে বেশি সৈনিকদের সমাধি ছিল, সেই অংশেই কবরখানা বাকি সামরিক সমাধিগুলো নিয়ে আসা হয়। এর ফলে বর্তমানে সামরিক ও অসামরিক সমাধিগুলোকে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে।
এই কবরখানাতে আছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মারা যাওয়া ৯৫ জনের সমাধি, যার মধ্যে ১৯৩৪ সালে একটি সমাধি নিয়ে আসা হয়েছিল ডায়মন্ড হারবারের অধুনা বিলুপ্ত চিংড়িখালি দূর্গ থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মৃত সৈনিকদের কবরের সংখ্যা ৬১৭টি। এছাড়াও, ওই প্লটের মধ্যে যে অসামরিক ব্যক্তিদের সমাধি ছিল, সেগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ করে কমনওয়েলথ ওয়ার কমিশন। সেই সমাধিগুলোর মধ্যে যেমন পূর্ণবয়স্ক মানুষদের সমাধি রয়েছে, তেমন রয়েছে ছোট বাচ্চাদের সমাধি। ছোট বাচ্চাটির সমাধির পাশেই রয়েছে একটি কুকুরের সমাধি, তবে ফলক অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় কুকুরটির বিষয়ে বিশেষ পড়তে পারলাম না।
প্রতি সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ৪.৩০টে পর্যন্ত খোলা থাকে এই কবরখানা। বিভিন্ন রেজিমেন্টের সৈনিকদের সমাধিতে রয়েছে সেই রেজিমেন্টের চিহ্ন, যা তৎকালীন সামরিক স্থাপত্য জানার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই কোনোদিন সুযোগ হলে দেখে আসতে পারেন এই সমাধিগুলো।
তথ্য সূত্র:
cwgc.org/visit-us/find-cemeteries-memorials/cemetery-details/92010/calcutta-bhowanipore-cemetery-kolkata/
Comments
Post a Comment