কোলকাতার গৌড়িবাড়ী অঞ্চলের কিছু বিখ্যাত জৈন মন্দির (Some Famous Jain Temples of Gouri bari, Calcutta)

বাংলায় জৈন ধর্মের মানুষের আগমন হয়েছিল ইংরেজ আমলের অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এদের মধ্যে যে ব্যাবসায়ী শ্রেণী ছিল, কোলকাতায় তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে ইংরেজ আমলেই। এরা মূলত সকলেই অর্থবান, এবং এসেছেন ভারতের পশ্চিম অংশ থেকেই। শুরুতে এনাদের মূল ব্যাবসা-সামগ্রী ছিল হীরা, জহরত, কাপড় এবং নুন। এই কারণেই কোলকাতায় গৌরীবাড়ী অঞ্চলে যে জৈন মন্দিরগুলো দেখা যায়, সেখানে ঐশ্বর্য্য ও বৈভবের প্রকাশ ভীষণ রকম পরিলক্ষিত হয়। আমরা এই ব্লগে দেখে নেবো এমনি চারটে মন্দির। 

১. শ্রী শ্রী শীতলনাথ স্বামী মন্দির এবং বাগান:

এই মন্দিরটি আলোচ্য চারটি মন্দিরের মধ্যে সবথেকে দৃষ্টিনন্দন। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরটি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত হিরা-জহরত ব্যবসায়ী এবং তৎকালীন জৈন সমাজের গোষ্ঠীপতি রায় বদ্রীদাস বাহাদুর মুকিম। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে দশম তীর্থঙ্কর শীতলনাথজির মানিক্যখচিত শ্বেতপাথরের মূর্তি।


সম্পূর্ণ শ্বেতপাথরের তৈরী এই মন্দিরে রয়েছে কাঁচ ও বর্ণময় পাথরের তৈরী অসংখ্য নকশা, এবং গর্ভগৃহের সামনে রয়েছে বিদেশি রঙিন টাইলস। এছাড়াও রয়েছে ১০৮ টি শাখা সহ বেলজিয়াম কাঁচের একটি ঝাড়লন্ঠন। মন্দির চত্বরে বাগানের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য মূর্তি এবং একটি জলাশয়। 


মন্দিরের প্রবেশদ্বার রাজস্থানি স্থাপত্যরীতির সাথে বঙ্গীয় চালারীতির সংমিশ্রণে তৈরী। এই মন্দির তৈরীতে সময় লেগেছিল প্রায় ২৫ বছর। মন্দিরটির দেখে H.E. Cotton লিখেছিলেন : "The combination temple and garden is the work of a real artist and both were designed by Rai Badridas Bahadur himself."


২. শ্রী জৈন শ্বেতাম্বর দাদাজির মন্দির:

১৮১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরটি জৈন শ্বেতাম্বরদের কোলকাতায় আদি মন্দির। শ্বেতপাথরের তৈরী এই মন্দিরের নিচু ভিতের ওপরে মাঝখানে নির্মিত মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে সিংহাসন, আর সেখানে প্রতিষ্ঠিত আছে জৈন তীর্থঙ্করদের চরণচিহ্নের প্রতীক। তবে মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে একটি গম্বুজ, যা ইসলামী স্থাপত্যের কথা মনে করায়।


৩. শ্রী শ্রী মহাবীর স্বামী জৈন শ্বেতাম্বর মন্দির ও বাগান:

১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে এই মন্দিরটি পত্তন করেন জৈন ব্যবসায়ী সুখলাল যোহারি। দোতলা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত আছেন চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর স্বামীর মূর্তি। মন্দিরের ভিতরে কিছু জৈন অলঙ্করণ আছে, এবং দরজাটি পিতলের পাত দিয়ে মোড়া। 

৪. শ্রী শ্রী চন্দ্রপ্রভুজির মন্দির:

শ্বেতপাথরের তৈরী এই মন্দিরটি ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন গণেশীলাল কাপুরচাঁদ জালান। এই মন্দিরের ভীড় খুবই উঁচু, এবং এখানে প্রতিষ্ঠিত আরাধ্য দেবতা হলেন অষ্টম তীর্থঙ্কর চন্দ্রপ্রভু স্বামী। বাকি তীর্থঙ্করদের মূর্তিগুলো আকারে বেশ ছোট, এবং শ্বেতপাথর ও পিতলের নির্মিত। মন্দিরের  সামনে রয়েছে বিস্তৃত বাগান, তবে আমার মনে হলো এই জায়গাটিতে রোদ কম পরার জন্য একটু আদ্রতা বেশি। মন্দিরের প্রবেশদ্বার রাজস্থানি ও বঙ্গীয় আটচালা রীতির মিশ্রণে তৈরী, এবং মন্দিরের চূড়া উত্তরভারতীয় শিখর শৈলীতে নির্মিত।

তথ্যসূত্র: কলকাতার উপাসনালয় প্রথম খণ্ড, পীযুষকান্তি রায়

Comments

  1. Dr Sanchita Dey26 March 2024 at 01:20

    Hat's off.Great.Very much pleased
    our society , with their every foot steps.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)