বেতড় অধ্যয়ন সম্মিলনী পাঠাগারের শতবর্ষ পূর্তি
হাওড়ার বেতড় অঞ্চলটি কলকাতার থেকেও অনেক বেশি প্রাচীন। মনসামঙ্গল কাব্যে এই স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। তৎকালীন এক বিখ্যাত নদীবন্দর হিসেবে। পরবর্তীকালে নদী গতিপথ বদল করলে, বন্দরটি অবলুপ্ত হয়।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে এখানে বাঁশ, কঞ্চি আর মাটি দিয়ে একটি ঘর বানিয়ে পত্তন করা হয় একটি পাঠাগারের, যার নাম দেওয়া হয় 'তরুণ প্রতিষ্ঠান'। বেতড় তখন জলা-জঙ্গলে ভরা একটা গ্রাম। মূলত এই লাইব্রেরি বানানো হয়েছিল গ্রামের গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য। তবে পরবর্তীকালে সশস্ত্র সংগ্রামের কিছু কিছু বিপ্লবীরাও এখানে আশ্রয় নিতেন।
শ্রদ্ধেয় স্কলার নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী এখানে তৈরী করে দেন পাকা ঘর, এবং ১৯২৫ সালের ১৪ই এপ্রিল (পয়লা বৈশাখের দিন) লাইব্রেরীর নতুন নামকরণ করেন "অধ্যয়ন সম্মিলনী"। পূর্ণচন্দ্র চ্যাটার্জী তাঁর বন্ধু মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে লাইব্রেরীর সামনে একটি কেরোসিনের ল্যাম্পপোস্ট বসানোর এবং পাঠাগারের উন্নতির জন্য বাৎসরিক কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করেন।
সেই সময় পাঠাগারের পরিচালন কমিটিতে ছিলেন নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী, সৌরেন্দ্রনাথ কর, নারায়ন চন্দ্র বসু, সূর্বণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপীকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডঃ ভূজেন্দ্রনাথ কর প্রমূখ। এছাড়া যাঁরা পরিচালন সমিতিতে না থাকলেও লাইব্রেরীর উন্নতির জন্য আত্মনিযোগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রফুল্ল কুমার মুখোপাধ্যায়, হরনাথ বসু, শচীন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অনুকূল চন্দ্র ঘোষ, যোগীন্দ্রনাথ বসু প্রমূখ। এছাড়া হাওড়া পৌরনিগমের প্রামান্য নথি থেকে পাওয়া যায় অরবিন্দ বসু ও মনীন্দ্রনাথ বসুর নাম, যাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য। চল্লিশ দশকে লাইব্রেরী এক আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ে। সাধারণ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লাইব্রেরী সেই সঙ্কট থেকে মুক্তি পায়।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাঠাগার পরিচালন কার্যক্রম অনুসারে, অধ্যয়ন সম্মিলনী সরকারী ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে, যে ব্যবস্থা এখনও চলছে। স্থানীয় মানুষদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবং লাইব্রেরিয়ান বিপুল চক্রবর্তীর অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে লাইব্রেরির এবং বাড়িটির সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে; নতুন করে রং করে, সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এখানে দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য সরকারি প্রবেশিকামূলক পরীক্ষার শিক্ষাদান করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে এনাদের পরিকল্পনা রয়েছে, অঞ্চলের প্রবীণ মানুষদের জন্য একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সূত্রপাত করার; সাথে সেই বয়স্ক মানুষদের কম্পিউটার শেখানো।
এই বছর (১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ) ওনাদের ১০০ বছর পূর্ণ হলো। বর্তমানে এখানে সদস্য-সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন। এখানে সদস্য পদ বিনামূল্যে গ্রহণ করে, প্রতিদিন বই পড়তে পারেন। পাঠাগারের ঠিকানা :
৫৮৬ সার্কুলার রোড, বেলেপোল হাওড়া - ৪ (হোটেল জাইকা ইন থেকে ইছাপুর যাওয়ার রাস্তায় বাম হাতে পড়বে)।
তথ্যসূত্র: লাইব্রেরিয়ান বিপুল চক্রবর্তী
Comments
Post a Comment