রাজা সুবোধ মল্লিকের বাড়ি (House of Raja Subodh Mullick)

রাস্তার ধারের একটা প্রাসাদের মত বড়ো কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি। সারা বাড়ির দেয়াল জুড়ে বট, অশ্বত্থ গাছ শিকড় বিস্তার করেছে। বাড়ীর সিংহ দরজার পাশেই, ফুটপাথে সংসার পেতেছে বেশ কয়েকটি পরিবার। বাড়ির ভাঙা-কপাট, অন্ধকার ঝুল বারান্দার দিকে তাকিয়ে গা ছমছম করে ওঠে। সন্ধেবেলায় এই জীর্ণ বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে বেশ ভয় পেতে হবে!


বাড়ির পাশে আছে একটা ফলক, যাতে লেখা আছে শ্রীঅরবিন্দ কলকাতায় অবস্থানকালে ১৯০৭ সাল পর্যন্ত এই বাড়িতে প্রধানত বসবাস করেছিলেন অতিথি হিসেবে। কোথাও লেখা নেই, এই বাড়িটিতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। তখনও এই বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন শ্রী অরবিন্দ। বাল গঙ্গাধর তিলক এসেছিলেন। এছাড়াও ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত-সহ আরো অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল এই বাড়িতে।


এই বাড়িটি বিখ্যাত রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিকের। ঠিকানা ১২ নম্বর রাজা সুবোধ মল্লিক স্ট্রিট, ওয়েলিংটন স্কোয়ার অঞ্চল। ব্রিটিশ ভারতের ৯ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৭৯ তারিখে জন্ম। মৃত্যু ১৪ নভেম্বর, ১৯২০। বিশিষ্ট বাঙালী শিল্পদ্যোগী। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লাইট অফ এশিয়া ইন্সুরেন্স কোম্পানী।


রাজা সুবোধ চন্দ্র বসু মল্লিক জনারণ্যে পরিচিত রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক নামে। আরও ছোট হয়ে সুবোধ মল্লিক। স্বদেশি আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ সময়ে অন্যতম গর্ভগৃহ ছিল এই বাড়িটি। এই বাড়িতেই দেশকে, জাতিকে শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তৈরি হয়েছিল ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন। যা আজকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আর তাতে সক্রিয় অংশগ্রণ ছিল রাজা সুবোধ মল্লিকের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে সেসময় দান করেছিলেন এক লক্ষ টাকা। উল্লসিত দেশবাসী তাঁকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়া জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনের ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।


বর্তমানে রাজবাড়ীটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। যদিও হেরিটেজ বিলিডিংয়ের তকমা পেয়েছে এই রাজবাড়ীটি কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নেই।

কালের অতলতলে হারিয়ে যাবার অপেক্ষার প্রহর গুনছে রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিকের বাড়ী।

Comments

Popular posts from this blog

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)

কোলকাতার পার্সি অগ্নি-মন্দিরগুলোর গল্প (The Parsi Fire Temples of Kolkata)

নতুন কোলকাতার পুরোনো ভুতেদের গল্প (Story of the Old Ghosts of New Calcutta)