খিদিরপুর ট্রামডিপো : এশিয়ার প্রাচীনতম কর্মক্ষম ট্রামডিপো (Kidderpore Tramdepot : The Oldest Operational Tramdepot of Asia)
ভারতবর্ষের প্রত্যেকটা শহরের একটা নিজস্বতা রয়েছে, যা সেই শহরটাকে অনন্য করে তোলে। তবে বাংলার তথা আপামর বাঙালির প্রাণের শহর কোলকাতার নিজস্বতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে ট্রামের ভূমিকা অপরিসীম।
কলকাতার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ট্রাম। শহরের প্রাচীনতম ‘আধুনিক’ বাহন এটি। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলে, রুট ছিল শিয়ালদা থেকে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। সেসময় ট্রাম টানতো ঘোড়ারা। ১৯ মাইল বিস্তৃত ট্রাম লাইন ধরে এই ঘোড়াগুলি ট্রাম টেনে নিয়ে যেত। পরে তার জায়গায় এসেছিল বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রিকাল ট্রাম। সেই ট্রাম, অনেক ঝড়-ঝঞ্জা পেরিয়ে এখনো টিঁকে রয়েছে এই শহরের বুকে। ভারতবর্ষ তো বটেই, সম্ভবতঃ এই ধরণের ট্রাম এশিয়াতে শুধু কোলকাতাতেই দেখা যায়। আর এখনো টিঁকে আছে খিদিরপুর ট্রাম ডিপো, যা বর্তমানে এশিয়ার প্রাচীনতম ট্রামডিপো।
১৯০০ সালের দিকে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। অনেক ভাবনাচিন্তার পরে বেছে নেওয়া হয়েছিল খিদিরপুরকে। বৃটিশ শাসনের প্রথম দিকে, খিদিরপুরে কোলকাতা বন্দরকে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি নদীবন্দর হিসেবে। ১৮৬৯ সালে এখানে চালু করা হয় জেটি, সাথে মাল ওঠা-নামা করার জন্য ক্রেন ও শেডের ব্যবস্থা করা হয়। সময়ের সাথে সাথে, খিদিরপুর অঞ্চলটি একটি ব্যস্ত বন্দরে রূপান্তরিত হয়, এবং সারা বিশ্ব থেকে নাবিকরা এখানে আসতে থাকেন। তাই ব্যবসার খাতিরে, ইংরেজ সরকার এই এলাকাটির উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। সাথেই এখানকার স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির ঘটানো হতে থাকে। তাই, ইলেকট্রিক ট্রাম চালানোর জন্যও এই খিদিরপুরকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়।
২৭শে মার্চ ১৯০২ সালে কোলকাতার প্রথম বৈদ্যুতিন (Electric) ট্রামটি চলেছিল এসপ্লানেড থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত। মাদ্রাজ ইলেকট্রিক ট্রামওয়ের পরেই, এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম। সময়ের সাথে সাথে ট্রাম রুটগুলি কালীঘাট, টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, শিয়ালদহ, বাগবাজার, কলেজ স্ট্রিট এবং হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এর ফলে, ট্রাম গণপরিবহণ মাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। শুরুর দিকে কোলকাতার মাত্র ১০টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রামডিপো ছিল, যথা - টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, কালিঘাট, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর, রাজাবাজার, বেলগাছিয়া, হাওড়া এবং নোনাপুকুর। এর মধ্যে নোনাপুকুরে ট্রাম মেরামত করার ব্যবস্থা রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে, ট্রামকোম্পানী (CTC) বাসও চালু করে, কিন্তু তাতে ট্রামের কৌলিন্য কমে নি।
আগে খিদিরপুর থেকে কালীঘাট, বালিগঞ্জ ও টালিগঞ্জে ট্রাম চলতো। এখন শুধু খিদিরপুর থেকে এসপ্লানেড রুটটা (৩৬ নম্বর) চলে। এই ৩৬ নম্বর রুটটা আমার ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দের! সবার খুব অনুযোগ, যে ট্রাম খুব ধীরে চলে। কিন্তু এই রুটে ট্রাম তার সর্বোচ্চ গতিতে চলে। আর ময়দানের বুক চিরে ট্রামটি যখন চলতে থাকে, তখন একদিকে রেড রোড-ফোর্ট উইলিয়াম আর অন্যদিকে সবুজ ময়দান! চলন্ত ট্রামের জানালার ধারের সিটের বসে দেখা এই বিস্তীর্ণ ও প্রসারিত সৌন্দর্যের দৃশ্য, সত্যিই আপনার মনকে ভালো করে দেয়।
তথ্যসূত্র: A Piece of Calcutta: The City of Tram, Poulami Dutta
কলকাতার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ট্রাম। শহরের প্রাচীনতম ‘আধুনিক’ বাহন এটি। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলে, রুট ছিল শিয়ালদা থেকে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। সেসময় ট্রাম টানতো ঘোড়ারা। ১৯ মাইল বিস্তৃত ট্রাম লাইন ধরে এই ঘোড়াগুলি ট্রাম টেনে নিয়ে যেত। পরে তার জায়গায় এসেছিল বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রিকাল ট্রাম। সেই ট্রাম, অনেক ঝড়-ঝঞ্জা পেরিয়ে এখনো টিঁকে রয়েছে এই শহরের বুকে। ভারতবর্ষ তো বটেই, সম্ভবতঃ এই ধরণের ট্রাম এশিয়াতে শুধু কোলকাতাতেই দেখা যায়। আর এখনো টিঁকে আছে খিদিরপুর ট্রাম ডিপো, যা বর্তমানে এশিয়ার প্রাচীনতম ট্রামডিপো।
১৯০০ সালের দিকে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। অনেক ভাবনাচিন্তার পরে বেছে নেওয়া হয়েছিল খিদিরপুরকে। বৃটিশ শাসনের প্রথম দিকে, খিদিরপুরে কোলকাতা বন্দরকে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি নদীবন্দর হিসেবে। ১৮৬৯ সালে এখানে চালু করা হয় জেটি, সাথে মাল ওঠা-নামা করার জন্য ক্রেন ও শেডের ব্যবস্থা করা হয়। সময়ের সাথে সাথে, খিদিরপুর অঞ্চলটি একটি ব্যস্ত বন্দরে রূপান্তরিত হয়, এবং সারা বিশ্ব থেকে নাবিকরা এখানে আসতে থাকেন। তাই ব্যবসার খাতিরে, ইংরেজ সরকার এই এলাকাটির উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়। সাথেই এখানকার স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির ঘটানো হতে থাকে। তাই, ইলেকট্রিক ট্রাম চালানোর জন্যও এই খিদিরপুরকেই প্রথম বেছে নেওয়া হয়।
২৭শে মার্চ ১৯০২ সালে কোলকাতার প্রথম বৈদ্যুতিন (Electric) ট্রামটি চলেছিল এসপ্লানেড থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত। মাদ্রাজ ইলেকট্রিক ট্রামওয়ের পরেই, এটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম। সময়ের সাথে সাথে ট্রাম রুটগুলি কালীঘাট, টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, শিয়ালদহ, বাগবাজার, কলেজ স্ট্রিট এবং হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। এর ফলে, ট্রাম গণপরিবহণ মাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। শুরুর দিকে কোলকাতার মাত্র ১০টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ট্রামডিপো ছিল, যথা - টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, কালিঘাট, গড়িয়াহাট, পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর, রাজাবাজার, বেলগাছিয়া, হাওড়া এবং নোনাপুকুর। এর মধ্যে নোনাপুকুরে ট্রাম মেরামত করার ব্যবস্থা রয়েছে। সময়ের সাথে সাথে, ট্রামকোম্পানী (CTC) বাসও চালু করে, কিন্তু তাতে ট্রামের কৌলিন্য কমে নি।
আগে খিদিরপুর থেকে কালীঘাট, বালিগঞ্জ ও টালিগঞ্জে ট্রাম চলতো। এখন শুধু খিদিরপুর থেকে এসপ্লানেড রুটটা (৩৬ নম্বর) চলে। এই ৩৬ নম্বর রুটটা আমার ব্যক্তিগতভাবে খুবই পছন্দের! সবার খুব অনুযোগ, যে ট্রাম খুব ধীরে চলে। কিন্তু এই রুটে ট্রাম তার সর্বোচ্চ গতিতে চলে। আর ময়দানের বুক চিরে ট্রামটি যখন চলতে থাকে, তখন একদিকে রেড রোড-ফোর্ট উইলিয়াম আর অন্যদিকে সবুজ ময়দান! চলন্ত ট্রামের জানালার ধারের সিটের বসে দেখা এই বিস্তীর্ণ ও প্রসারিত সৌন্দর্যের দৃশ্য, সত্যিই আপনার মনকে ভালো করে দেয়।
তথ্যসূত্র: A Piece of Calcutta: The City of Tram, Poulami Dutta
Comments
Post a Comment