নবদেবালয় ও ব্রাহ্ম সমাধিস্থল (Nabadebalay and Brahmo Cemetery)

আজকের রাজাবাজার অঞ্চলে যে ভিক্টরিয়া কলেজ আছে, তা একসময় ছিল বিখ্যাত ব্রাহ্মনেতা কেশব চন্দ্র সেনের বসতবাড়ি... "কমল কুটির"। বর্তমানে এই বাড়িতে কলেজ স্থাপিত হলেও, একটি ব্রাহ্ম-উপাসনালয় রয়েছে এই বাড়িতে... যার নাম "নবদেবালয়"।



এই নবদেবালয় সংলগ্ন জমিতে রয়েছে ব্রাহ্ম সমাধিস্থল, যাতে রয়েছে কেশব সেন ও তার পরিবারের সমাধি। এছাড়াও কিছু বিশিষ্ট ব্রাহ্ম ব্যক্তিত্বের সমাধি আছে এখানে।



এই সমাধিস্থলে যে বিষয়টি সবথেকে আকর্ষণীয়, তা হলো এই সমাধিগুলোর স্থাপত্যরীতি। এগুলো সবার থেকে আলাদা। একমাত্র এখানেই আমি দেখেছি হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিষ্টানধর্মের প্রতীক একসাথে ব্যবহার করা হয়েছে। সমাধিগুলোতে রয়েছে 'ওঁ' (হিন্দুধর্মের প্রতীক), ক্রস (খ্রিষ্টানধর্মের প্রতীক), এবং অর্ধচন্দ্র (মুসলিমধর্মের প্রতীক)। এটি মহান রাজা রামমোহন রায়ের দর্শনের প্রকৃত প্রতিফলন। তিনি গোঁড়া হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে মূর্তি পূজার বিরোধিতা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ইসলাম, খ্রিস্টান এবং সুফিবাদের একেশ্বরবাদ এবং মূর্তিপূজা বিরোধীতা দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক ও যুক্তিবাদী মতবাদ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। "সকল ধর্ম এবং মানবতার এক ঈশ্বর", এই ধারণাটিকেই তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।



সমাধিফলকগুলি বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা। কয়েকটা ফলক ঝাপসা হয়ে এলেও, প্রায় সবকটিই পড়া যায়। ছোট-বড়ো মিলিয়ে ২৩টি সমাধি আমি দেখলাম সমাধিস্থলে।



এখানে ঢুকতে কোনো টাকা লাগে না, শুধু কলেজের গেটের দারোয়ানের থেকে অনুমতি নিতে হবে। আমি অনেক সমাধিস্থলে গেছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা একদম অনন্য।

ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে আরো জানতে এই ব্লগটি পড়ে দেখতে পারেন।
https://bit.ly/3xF5bK7

Comments

Popular posts from this blog

জন্নত-এ-জাকারিয়া : রমজানের সময় জাকারিয়া স্ট্রিটে ইফতারের খানা-খাজানার ইতিহাস (Jannat-e-Zakaria : a brief history of the Iftar foods available at Zakaria Street in Ramzan time)

একটা ঘড়ি, গেট আর এক বিস্মৃত রাজকুমার (The Ghari Ghar Gateway and a forgotten Prince)

নিমতলা আর নিয়ামাতুল্লা ঘাট মসজিদের গল্প (The story of Nimtala and Niyamathullah Ghat Mosque)