কামারঘাট দ্বাদশ শিব মন্দির, টালিগঞ্জ (Kamarghat Dwadosh Shiv Mandir, Tollygaunge)
উইলিয়াম টলি যে আদিগঙ্গার সংস্কার করেছিলেন, আজও তা টালিনালা নামে বয়ে চলেছে। এর দুই পাড়ে রয়েছে অনেক ঘাট ও মন্দির। বেশিরভাগ মন্দিরই কোনো না কোনো পরিবারের ব্যক্তিগত মন্দির, কোনো ট্রাস্টের অধীনে না।
টালিগঞ্জ এলাকায় সেরকমই এক গুচ্ছ শিব মন্দির আছে প্রাণকৃষ্ণ চন্দ্র লেনে। এখানে যেতে গেলে, আদিগঙ্গার ধার দিয়ে কিছুটা অলি-গলি পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে। প্রায় বর্গাকার একটি মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে ১২টি একই মাপের শিব মন্দির। মন্দির প্রাঙ্গণে ঢুকতেই ডান দিকের মন্দিরটিতে লাল রঙে উল্লেখ করা আছে...
"কামারঘাট
দ্বাদশ শিব মন্দির
স্থাপিত
সন ১২৫৯ সাল"
প্রাঙ্গণের চার কোণে, চারটি 'L' আকৃতির এক মানুষ সমান উঁচু ভিতের ওপরে, তিনটে করে শিব মন্দির। চার জায়গায় তিনটে করে মন্দির, ফলে সব মিলিয়ে ১২টি মন্দির। প্রতিটি মন্দির আটচালা স্থাপত্যরীতির, আর দরজার ওপর ফ্যানলাইটের কাজ আছে। সাথে একটা নতুনত্ব এখানে দেখা যায়, সেটা হলো মন্দিরগুলোর বাইরের দেওয়ালে নকল খরখড়ির জানালার ডিজাইন করা!
প্রতিটি মন্দিরে আছে একটি করে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ, একটি ধাতব সর্প, একটি ত্রিশূল আর একটি পাথরের নন্দী-মূর্তি। উঠোনের মাঝে আছে একটি তুলসীমঞ্চ, আর আছে পায়রাকে দানা খাওয়ানোর জায়গা। আগে এই মন্দিরগুলো সংলগ্ন একটা গঙ্গার ঘাট ছিল, বহুদিন আগেই তা নদীভাঙ্গনে বিলুপ্ত হয়েছে। তবে জোয়ার এলে উঠোনে জল ভরে যায়, সেই জন্যই এতো উঁচু ভিতের ওপরে মন্দিরের অবস্থান।
এবার আসা যাক এই মন্দিরগুলোর ইতিহাস প্রসঙ্গে। বেহালার কামারপাড়া অঞ্চলে থাকতেন চন্দ্র পরিবার। এনাদের এক বংশধর নীলমণি চন্দ্র, পরবর্তীকালে টালিগঞ্জ অঞ্চলের এই পাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। গঙ্গা-তীরবর্তী এই অঞ্চলটারও নাম ছিল কামারঘাট। সেই নীলমণি চন্দ্র, বাংলা ১২৫৯ সনে অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৫২ খৃস্টাব্দে এই মন্দিরগুলোর পত্তন করেন। ওনার মৃত্যুর পরে, এই দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয় পুত্র প্রাণকৃষ্ণ চন্দ্রর কাছে, যার নামেই আজকে মন্দিরগুলোর সামনের রাস্তা। ওনার উত্তরপুরুষেরাই এখনো মন্দিরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
বয়সের নিরিখে অনেকটাই পুরোনো হলেও, মন্দিরগুলোর প্রাচীনত্বকে বজায় রেখে নিয়মিত সংস্কার করা হয়েছে, তাই বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে সেগুলি। স্থানীয় লোকজনের থেকে জানতে পারলাম, এখানে বেশ কিছু বাংলা চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের শ্যুটিংও হয়। আর এভাবেই নতুনত্বের মোড়কে, পুরোনো ঐতিহ্য প্রবহমান থাকে...
তথ্য সহায়তা: দিপাঞ্জন ঘোষ ও কিঞ্জল বোস
Comments
Post a Comment